শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৫

Scientific error in Qur`an ************************ Error 404: not Found

লিখেছেন: শমশের



        কুরআন শরীফ এক অপার বিস্ময়! কিভাবে এতে হাজারের উপর বৈজ্ঞানিক আয়াত মাথা উচু করে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছে নাস্তিকসহ বোদ্ধামহলে এক বিরাট কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে। একের পর এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কিভাবে কুরআন এর সাথে মিলে যাচ্ছে তার কোন জাগতিক ব্যাখ্যা আমরা খুঁজে পাইনা। এতসব আবিষ্কার যতই কুরআন এর সাথে মিলে যাচ্ছে ততই কমছে নাস্তিকতার পাল্লাটা। ইউরোপ সহ সারাবিশ্বে ইসলাম এখন দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। অপর দিকে কুটিল মনের নাস্তিকদের সংখ্যা যে দিনকে দিন কমছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। নাস্তিকতার কঠিন বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে এসে ফরহাদ মজহারদের মত লোক আজ মৌলবাদী হয়ে যায়। নাস্তিকরা কুরআন থেকে যতগুলি কন্ট্রাডিকশন খুজে বের করার চেষ্টা করেছে ততবার ধরা খেয়েছে। 
কুরআনে  কোন বৈজ্ঞানিক ভুল না পেয়ে তারা এরপর শুরু করে অপপ্রচার। কুরআনে যা বলা হয়নি, তাই তারা বলা শুরু করে। তাদের অপপ্রচারের একটা প্রোপাগ্যান্ডা হল পৃথিবী সমতল। তারা দাবি করে কুরআনে নাকি বলা হয়েছে পৃথিবী সমতল। প্রমাণ হিসেবে তারা যেসব আয়াত ব্যবহার করে তা দেখলে একজন সাধারন শিশুও হাসবে। তারা যেভাবে এসব আয়াত ব্যবহার করে তাতে আসলে না হাসার কোন কারন নেই। যাইহোক তাদের এই প্রোপাগ্যান্ডার জবাবটা আমরা দিব। এখানে জবাবের কিছুই নেই, বরঞ্চ তাদের আলোর দিকে নিয়ে আসাটাই আমাদের লক্ষ্য। আশা করব এরপরে তারা আর এবিষয়ে তর্ক করবেনা। আজকে আমার উদ্দেশ্য পৃথিবীকে গোলাকার প্রমাণ করা নয়। কারন তা প্রমাণ করতে কেবল একটা শব্দই যথেষ্ট। দাহাহা। 
rashad khalifa কিংবা QXP[Shabbir Ahmed (writer)
এর অনুবাদ দিয়েই তা প্রমান করে যায়। একটা অনুবাদ ও একটা স্ক্রিনশর্ট দিচ্ছি দাহাহা নিয়ে। 


QXP: And after that He made the earth shoot out from the Cosmic Nebula and made it spread out egg-shaped (79:30)





বরং আমার উদ্দেশ্য হল কেন আল্লাহ এখানে বিছানা বা কার্পেটের মত শব্দ বেছে নিয়েছেন। আমার এ নোটে অনেকেরই অনুবাদই  ব্যবহার করেছি। আপনারা চাইলে ইন্টারনেটের এই, এই, এই, এই সাইটে গিয়ে আয়াতগুলো চেক করতে পারেন। 

আগে দেখা যাক তারা কোনসব আয়াত ব্যবহার করে,



তিনি ভূমিকে করেছেন বিছানা এবং আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ 

"আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন।" [সূরা-বাক্কারাহ- ২: ২২]

"তিনিই ভূমন্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং এতে পাহাড় পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন।" [সূরা- রা’দ- ১৩: ৩]

"তিনি তোমাদের জন্য ভুমিকে শয্যা করেছেন।" [সূরা-ত্বোয়াহা- ২০:৫৩]

"আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। [সূরা আম্বিয়া- ২১:৩২]

"আল্লাহ, পৃথিবীকে করেছেন তোমাদের জন্যে বাসস্থান, আকাশকে করেছেন ছাদ।" [সূরা আল মুমিনুন- ৪০:৬৪]

"যিনি তোমাদের জন্য ভুমিকে করেছেন বিছানা।" [সূরা-যুখরুফ-৪৩:১০]

"আমি ভূমিকে বিছিয়েছি আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম" [সূরা-আয-যারিয়াত-৫১:৪৮]

"আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিছানা।" [সুরা নুহ - ৭১: ১৯]

"আমি কি করিনি যমীনকে একটি প্রশস্ত বিছানা এবং পর্বতমালাকে পেরেক।" [সুরা আন নাবা – ৭৮;৬-৭]

"এবং যমীনের দিকে যে, তা কিভাবে বিছানো হয়েছে?" [সুরা গাশিয়াহ- ৮৮:২০]



এই আয়াতগুলির দ্বারা তারা খুব সুকৌশলে প্রচার করার চেষ্টা করা হয়েছে যে এখানে নাকি পৃথিবীকে সমতল বলা হয়েছে। বিছানা সমতল এজন্য নাকি পৃথিবী সমতল। একজন সুস্থ মানুষ বিছানা কল্পনা করলে সে কি সমতল পৃথিবীর কথা চিন্তা করবে নাকি আরাম আয়েশের কথা চিন্তা করবে? নাস্তিকেরা এটা চিন্তাও করেনা। বিছানা যে সমতলের প্রতীক নয়, সেটি যে আরাম আয়েশের প্রতীক সেটা তারা ভুলে যায়। চাঁদমুখ দ্বারা আমরা অনেক সুন্দর মুখের অবয়ব কল্পনা করি, কিন্তু তাদ্বারা কি কখনো চিন্তা করি যে মুখ জ্যোৎস্না ছড়ায়??
কিংবা বিষাদ সিন্ধু দ্বারা কি আমরা দুঃখের কোন জলাসয় বুঝি নাকি অনেক কষ্ট বুঝি??
এই সব ছাগল(নাস্তিকদের নতুন নাম) গুলা বুঝেওনা যে তুলনা দ্বারা এক্সাটলি সঠিক বুঝায়না বরং কাছাকাছি কিছু বুঝায়। আগুনের শিখাকে তারা পাহারের সাথে তুলনা করতে চায়। কিভাবে বিছানাকে আরাম আয়েশের চিন্তা না করে সমতলের সাথে তুলনা করতে যায় তা আমার বুঝে আসেনা। আমার এই নোটটি দুটি পার্টে বিভক্ত করা হয়েছে। আমরা দুটি পার্টই খুব সুন্দর করে বুঝার চেষ্টা করি।


প্রথম অংশঃ বিছানা সদৃশ ক্ষুদ্র জায়গা কি সমতল??


যারা বিজ্ঞানে অনাগ্রহী তারা এই অংশটি চাইলে বাদ দিতে পারেন। শুধুমাত্র ফলাফল অংশ দেখতে পারেন।

পৃথিবী সমতল কিনা তা জানার আগে  আগে সর্বপ্রথম সমতল পৃথিবী নিয়ে বাংলা উইকিপিডিয়ার লেখাটা পড়ি


সমতল পৃথিবী ( Flat Earth) বলতে এখানে পৃথিবী গোলাকার নয়, বরং সমতল, এই ধারণাকে বোঝানো হচ্ছে। অনেক আগে সবার ধারণাই এমন ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকে গ্রিকরা পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে সঠিক ধারণা পোষণ করতে শুরু করে। এই সময় থেকেই পৃথিবীর অনেক স্থানে সমতল পৃথিবীর ধারণা পরিত্যক্ত হতে শুরু করে। চারপাশে তাকালে পৃথিবীকে সমতল মনে হয়। কারণ পৃথিবী এতো বড় গোলক যে, কোন নির্দিষ্ট স্থান থেকে চারপাশটা সমতল মনে হয়। বিজ্ঞানের যে পরীক্ষাগুলোতে পৃথিবীর উপরিতলের ছোট কোন অংশ নিয়ে কাজ করা হয় সেখানে সমতলই ধরা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ফলাফলের খুব একটা হেরফের হবে না। কিন্তু বৃহৎ দূরত্বের ক্ষেত্রে অবশ্যই গোলাকার ধরতে হয়।" 

অর্থাৎ এখান থেকে দেখা যায় ছোট অংশ নিয়ে কাজ করলে তাকে সমতল বলা যায় কিন্ত তা সমতল নয়। যদিও তাকে সমতল ধরলে ফলাফলের খুব বেশি তারতম্য হয়না । তাই যদি কেউ পৃথিবীর ক্ষুদ্র অংশকে সমতল বলতে চান তবে বলতে পারেন কিন্ত তাকে অকাট্যভাবে সমতল বলা যেমন অযৌক্তিক তেমন কেউ গোলাকার বললে তার বিরুধিতা করাও একধরনের গোয়ার্তুমি। পৃথিবীর ক্ষুদ্র অংশকে পৃথিবীর গোলাকার অংশের একটা চাপ বলা যেতে পারে।

একটু অন্যভাবে চিন্তা করি এবার। পৃথিবীর আকৃতি বলতে গেলে আমরা জানি এটা oblate spheroid. তবে হিসাবের সুবিধার্থে এটাকে গোলাকার বিবেচনা করা হয়। নিউটনের সূত্রসহ কোপার্নিকাসের সূত্রেও পৃথিবীসহ সকল গ্রহকে বৃত্তাকার বিবেচনা করা হয়। যদিও আমরা জানি পৃথিবী গোলাকার নয় তবুও মহাবিশ্ব ও পৃথিবীর সাপেক্ষে পৃথিবীকে গোলাকার বা বৃত্তাকার বলায় কোন অসঙ্গতি থাকবে না।

এখন যেকোন বৃত্তাকার ক্ষেত্রের পরিধির যেকোন বিন্দুতে আমরা স্পর্শক আকতে পারি। ক্ষেত্র যত বড় হবে এই স্পর্শক বিন্দুও তত স্পষ্টভাবে ধরা দিবে। একটা বৃত্তের যেকোন একটা বিন্দুতে চিত্রের মত করে একটা স্পর্শক আকি। দেখুন চিত্রে স্পর্শক ও বৃত্তের পরিধি একটি বক্রতা উৎপন্ন করেছে যা ধারনা দিচ্ছে যে বৃত্তের পরিধি সোজা নয় বরং বক্র।
এখন যদি এই চিত্রটিকে আরো বড় করি তবে এই স্পর্শক আরো স্পষ্ট হয়ে কোন বিন্দুতে দেখা যাবে। যদি বৃত্তকে বড় করতে করতে পৃথিবীর মত বিশাল করা যায় তবে বাড়ির উঠানের যেকোন একটা বিন্দুতেও একটা স্পর্শক আকা যাবে। এই বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক ভূ-পৃষ্ঠের সাথে বক্রতা সৃষ্টি করবে তা যতই কম হোকনা কেন।


সুতরাং বলা যায় কোন ক্ষেত্রের কোন বিন্দুতে যদি স্পর্শক আকা যায় এবং তা যদি বক্রতা উৎপন্ন করে তবে তাকে round shape (circle, parabola, spheroid etc.)  বলা যাবে।



এখন আমি আমার বাড়ির উঠানের এক মিটার জায়গা বিবেচনা করলাম। এই জায়গায় একটা বিন্দুও বিবেচনা করলাম। এই বিন্দুটির উপরে অসীম থেকে আসা একটি সরলরেখা দ্বারা একটি স্পর্শক কল্পনা করলাম। পৃথিবীর কেন্দ্র(চিত্রে O)  থেকে এই স্পর্শ বিন্দু যোগ করলাম। তাহলে ব্যাসার্ধ ও স্পর্শক ৯০ ডিগ্রী কোন উৎপন্ন করবে। কিন্তু কল্পিত চিত্রে দেখা যাবে পৃথিবীপৃষ্ঠ স্পর্শকের সাথে একটি বক্রতা উৎপন্ন করবে(যা খুব কম)। এ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে পৃথিবী গোলাকার।

এ সংক্রান্ত কয়েকটি আলোচনামূলক পোষ্ট দিয়েছিলাম কয়েকটি গ্রুপে। সেখান থেকে দুটি স্ক্রিনশট তুলে ধরলাম।

চিত্রঃ-১

চিত্রঃ-২

Atheist Bangladesh গ্রুপের অনেকেই এই আলোচনায় সত্য তুলে ধরতে চায়নি বরং বারবার এড়িয়ে গেছে। এই লিংকে গেলেই তা আপনারা দেখতে পারেন।


সুতরাং সিদ্ধান্ত নেয়া যায় হিসাবের সুবিধার্থে পৃথিবীর ক্ষুদ্র অংশকে (বিছানা সদৃশ) সমতল বলা গেলেও তা আসলে সমতল নয় বরং তা বক্রতলের অন্তর্ভুক্ত যাকে পৃথিবীর চাপ বলা যেতে পারে।


ক্ষুদ্র অংশ কি বিন্দু??

আসুন একটা অংক করি
আমরা যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তারা সবাই জানি যে, গোলাকার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রে, s=rq. (এখানে q  মানে থিটা বোঝানো হয়েছে) 

এখন পৃথিবীর যেকোন অক্ষাংশের উপর ১ মিটার দূরত্বে দুটি বিন্দু চিন্তা করি। ধরি, এখানে s= ১ মিটার . এখান থেকে ৬৪০০০০০ দুরত্বে অর্থাৎ পৃথিবীর কেন্দ্র হতে রেখাটির দুই প্রান্ত বিন্দুতে দুটি সরলরেখা টানি। এখানে r= ৬৪০০০০০ মিটার।



তাহলে  s=rq সূত্রানুসারে q এর মান হবে ০.০০০০০০১৫৬২৫°। এটাকে বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রকাশ করলে দেখা যায় এর মান ১.৫৬২৫×১০^-৭। আমরা সবাই জানি ১০ এর উপরে মাইনাস (-) ৫০ না থাকলে তাকে বিন্দু  বলা যায়না। 

তাই এই সুত্রানুযায়ী এই ১ মিটার জায়গাকে কোন ভাবেই বিন্দু বলে বিবেচিত হবেনা।

আরো একটু লক্ষ্য করিঃ 

মানুষ  যদি চিন্তার সীমাবদ্ধতায় ভোগে তবে সে কার্পেট বা বিছানাকে সমতলই ধরে নিবে। স্ফেরিকাল কিংবা বক্র বিছানা কি অসম্ভব??- নয়। আমি যদি পুরো পৃথিবীকে কার্পেট দিয়ে মুড়িয়ে দেয়ার চিন্তা করি তবে কি সেই বিছানা সমতল হবে??-না। সেটি স্ফেরিকালই হবে। আপনি পাহাড়ি অর্ধবৃত্তাকার রাস্তায় কার্পেটিং করুন, সেটা কি সমতল হবে?-না। বরং বক্র হবে

তাহলে কেন কার্পেট বা বিছানা বলতেই সমতল বুঝতে হবে??  




ফলাফলঃ এই অংশ থেকে বুঝা গেল পৃথিবীর উপরিতলে বিছানা সদৃশ ক্ষুদ্র অংশ কখনোই বিন্দু কিংবা সমতল হতে পারেনা বরঞ্চ তা বক্র তলেরই অংশ যাকে হিসাবের সুবিধার্থে সমতল কিংবা বিন্দু বিবেচনা করা যেতে পারে। আরো বুঝা যায় কার্পেট বা বিছানার মত অংশকে যদি ভূমিতে কল্পনা করা যায় কিংবা কোন কার্পেটকে ভূমিতে বিছানো হয় তবে তা সমতল হবেনা বরং তা ভূমির আকার পাবে যা বক্র।


দ্বিতীয় অংশঃ তাহলে বিছানা শব্দ দ্বারা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে কি বুঝাতে চেয়েছেন???

এ কথা পরিষ্কার যে, বিছানা দ্বারা কখনোই সমতল বুঝানো হয়না বরং আরাম বা আয়েশ বুঝানো হয়। তাহলে আল্লাহ কেন পৃথিবীকে আরাম আয়েশের কথা বুঝিয়েছেন?

আসুন পর্যালোচনা করি। বলে রাখি এ অংশটুকু বিভিন্ন সাইট ও বই থেকে নেওয়া। কিছুক্ষেত্রে তা এফ.জেড করিম ভাইয়ের অনুরুপ। তার বই থেকেও কিছুটা অংশ নিয়েছি।  

বিছানা/কার্পেট এর সংজ্ঞা কি?? শক্ত, এবড়ো থেবড়ো জায়গার উপর আরামদায়ক কোন আবরন যার উপর আমরা আরাম অনুভব করতে পারি।

এবারে পৃথিবীর উপর সার্চলাইট ফেলি। আমরা জানি, পৃথিবী লেয়ারে লেয়ারে বিভক্ত এবং সব লেয়ার জীবন ধারনের উপযোগী নয়।



আধুনিক বিজ্ঞান বলছে পৃথিবীর লেয়ার হচ্ছে কয়েকটি। যদিও কুরআন সাতটি স্তরের কথা বলছে,“আমি সপ্তাকাশ নির্মাণ করেছি এবং পৃথিবীও একই পরিমানে” [৬৫;১২]



ভালো করে গুনে দেখুন পৃথিবীর স্তর সাতটি 


চোখে আংগুল দিয়ে দেখুন আকাশের সাতটি স্তর

তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম তাদের আরেক প্রোপাগান্ডা-আকাশ কঠিন পদার্থ-ছাদ। ছাদ গম্বুজ বা চাদোয়া আকৃতিরও হয়। তাহলে নিশ্চয়ই তখন লোকজন ভাবত কঠিন আকাশ চাদোয়া আকৃতির(:-p)। তাহলে  এবারে এই ছবিটা দেখুন। 



কি কঠিন আকাশের(বাচ্চাদের লোল) সাপেক্ষে কি পৃথিবী সমতল??


সাত আকাশ ও আকাশ যে পৃথিবীর ছাদ সে নিয়ে পরে আরো একটি নোট লেখা যাবে আশা করছি।


যাইহোক, বিজ্ঞানের এই স্তরগুলার  মধ্যে কেবল উপরের স্তর তথা Crust এ-ই জীবন ধারন সম্ভব। এটি পৃথিবীর স্তরের সবচেয়ে পাতলা আবরন। এর পুরুত্ব  মাত্র ৩০ কিলোমিটার। অর্থাৎ আমরা যার উপর রান্না করি, চলাফেরা করি, ঘুমাই, দাঁড়িয়ে থাকি তার পুরুত্ব মাত্র ৩০কিলোমিটার।
এর নিচের স্তর হল ম্যান্টল যা প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার। এর তাপমাত্রা ৫০০ থেকে ৯০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কতটা ভয়াবহ বুঝতে পারছেন? এই তাপমাত্রায় সেখানে এককোষী জীবও বেঁচে থাকতে পারেনা।



চিন্তা করুন crust মাত্র ৩০ কিলোমিটার পুরু এরপর এই দানবীয় Mantle যা পাথুরে, গলিত এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা। একমাত্র crust ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব্ব যে অসম্ভব তা বুঝতেই পারছেন অথচ পুরা পৃথিবীতে এর মাত্রা মাত্র ১%। সমুদ্রের তলদেশেও এই crust রয়েছে।



ম্যান্টলের পরে outer core শুরু। যার তাপমাত্রা সম্পর্কে উইকিতে বলা আছে তার তাপমাত্রা ৩৭০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এটি ২৮৯০ কিলোমিটার পুরু। ভুপৃষ্ঠ থেকে যতই নিচে নামা হয় তাপমাত্রা ততই আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়। এরপর রয়েছে inner core যার তাপমাত্রা ৫৪৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এটি প্রায় ১২২০ কিলো পুরু। এই তাপমাত্রা (inner core) প্রায় সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার সমান।

Crust বা ভূপৃষ্ঠের নিচে যতই যাবেন তাপমাত্রা ভয়ানকভাবে বাড়তে থাকবে। এমনকি কেন্দ্রের তাপমাত্রা সূর্যপৃষ্ঠের কাছাকাছি হবে। সেখানে জীবনধারন অসম্ভব। কার্পেট বা বিছানার মত মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের crust কে বিছিয়ে দিয়েছেন। বিছানা আরামের জন্য ব্যবহার করা হয়, crust ও তেমনি পৃথিবীর বিছানা যাকে জীবকূলের জন্য আরামদায়ক করা হয়েছে। যাতে আমরা চলাফেরা করতে পারি সহজে, যাতে চলার পথ আছে, যাতে ফসল উৎপন্ন হয়। 


আল কুরআনে বলা আছে ------

"তিনিই তোমাদের জন্য মাটির শয্যা বিছিয়েছেন, আকাশের ছাদ তৈরি করেছেন, ওপর থেকে পানি বর্ষণ করেছেন এবং তার সাহায্যে সব রকমের ফসলাদি উৎপন্ন করে তোমাদের আহার যুগিয়েছেন। কাজেই একথা জানার পর তোমরা অন্যদেরকে আল্লাহর প্রতিপক্ষে পরিণত করো না।" [সূরা বাকারা: ২:২২]

"তিনিই তোমাদের জন্য যমীনের বিছানা বিছিয়েছেন, তার মধ্যে তোমাদের চলার পথ তৈরী করেছেন এবং উপর থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তারপর তার মাধ্যমে আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করি।" [সূরা-ত্বোয়াহা-২০:৫৩]


"তিনিই তো সৃষ্টি করেছেন যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানারুপে বানিয়েছেন এবং সেখানে তোমাদের জন্য রাস্তা তৈরী করে দিয়েছেন। যাতে তোমাদের গন্তব্যস্থলের পথ খুঁজে পাও।" [সূরা-যুখরুফ-৪৩:১০]

"আমি ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।" [সূরা-আয-যাজিরাত-৫১:৪৮]

"আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিছানা। যেন তোমরা এর প্রশস্ত পথে চলতে পারো" [আল কুরআন- ৭১:১৯-২০]

"আমি কি করিনি পৃথিবীকে একটি প্রশস্ত বিছানা এবং পর্বতমালাকে পেরেক।" [আল কুরআন – ৭৮;৬-৭]

"এবং আর যমীনকে দেখছে না, কিভাবে তাকে বিছানো হয়েছে?" [৮৮:২০]



স্পষ্টত বলা হয়েছে– এই বিছানা বিছানো হয়েছে-যাতে আমরা চলাফেরা করতে পারি। প্রায় সবজায়গায়ই বলা আছে ভূমি বা যমীনকে বিছানো হয়েছে- পৃথিবীকে নয়।



এই আয়াত নিয়েও বলি,
"তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে সুগম করেছেন, অতএব তোমরা তার কাঁধে বিচরণ কর এবং তার দেয়া রিযিক আহার কর। তারই কাছে পুনরুজ্জীবন হবে।" (৬৭:১৫)

এই আয়াতও পৃথিবীর  উপরের স্তরের কথা বলেছে।


ভুপৃষ্ঠের নিচে লোহা, নিকেল, গলিত পাথর লাভা ইত্যাদি থাকে যা বসবাসের অনুপযোগী। তাই তার উপরে ভুমিকে বা crust বিছিয়ে তাকে বসবাস উপযোগী করা হয়েছে। ঠিক বিছানার মত যা এবড়ো থেবড়ো জায়গায় আরাম পাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। আপনি যদি বিছানা বা কার্পেট সংক্রান্ত আয়াতগুলা লক্ষ করেন দেখবেন ভুমিকে কার্পেট আকারে বিছানো হয়েছে এই কথাবলার সাথে সাথে বলা হয়েছে –যাতে তোমরা চলাফেরা করতে পারো-ফসল উৎপন্ন করতে পারো ইত্যাদি। কিন্তু আইওয়াশে বিশ্বাসী ছাগলগণ কখনোই পরের অংশটুকু তুলে ধরেনা, কারন তাতে বুঝা যায় এটা দ্বারা পৃথিবী বুঝানো হয়নি। বুঝানো হয়েছে ভূমি।


আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদগত করেছি (৫০;৭)

এখানে স্পষ্ট বোঝা যায় যে এখানে পৃথিবীর উপরিতলকেই বুঝানো হয়েছে।

তার চেয়ে বড় কথা আমরা কিভাবে crust সম্পর্কে বুঝতে পেরেছি তা নিম্নের আয়াতে দেখুন,

"আমি কি করিনি পৃথিবীকে একটি প্রশস্ত বিছানা" (৭৮/৬)

জহুরুল হক অনুবাদ করেছেন, “আমরা কি পৃথিবীটাকে  পাতানো- বিছানা-রূপে বানাইনি”
বিছানা কিসের উপরে পাতানো হয়? কোন কঠিন বা বসবাসের উপযোগী নয় এমন পদার্থের  উপরে নয় কি? তেমনি পৃথিবীর ম্যান্টলের উপর পৃথিবীর উপরিতল বা ভূমি অথবা crust পাতানো হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে পৃথিবী জুড়ে কার্পেট বা বিছানার মত করে ভূমিকে বিস্তৃত করা হয়েছে।


আরো একটি উদাহরণ দেয়া যায়। সূরা নাবার ৬ ও ৭ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

         "আমি কি করিনি পৃথিবীকে একটি প্রশস্ত বিছানা এবং পর্বতমালাকে পেরেক।" (আল কুরআন– ৭৮;৬-৭) 




এখানে দেখুন পৃথিবীকে(ভুমিকে) প্রশস্ত বিছানা বলা হয়েছে এবং পাহাড় পর্বতকে পেরেক রুপে স্থাপন করা হয়েছে। আমরা সবাই জানি, mantle এর গলিত, উত্তপ্ত ও পাথুরে ম্যাগমার উপর crust অবস্থিত। যদি পাহাড় সমূহ না থাকত তবে ভূমি mantle এর উপর গড়াগড়ি খেত। যার ফলে জীবনধারন সম্ভব হতনা কারন তখন পৃথিবী ঢলে পড়ত। পাহাড়ের বেশির ভাগ অংশই ভূমির ভেতর প্রোত্থিত থাকে। এজন্য পাহাড়-পর্বতসমূহ ভুমিকপের প্রচন্ড চাপ সহ্য করতে পারে এবং ভূমির উপর ধ্বংসলীলার সিংহভাগই প্রশমন করতে পারে। এজন্য দেখবেন পাহাড়ি অঞ্চলে ভুমিকম্প বেশি হয় এবং তৎসংলগ্ন এলাকার ক্ষতির পরিমানটাও একটু বেশিই থাকে। গত ২৫/৪/২০১৪ইং নেপালে ভয়াবহ ভুমিকম্প হয়েছে।<a h ref="http://edition.cnn.com/2015/04/26/asia/nepal-earthquake/index.html">শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৯০০ এর বেশি লোক নিহত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতেও কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আল্লাহ আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করার তৌফিক দিন।

বিজ্ঞানীরা পাহাড়সমূহে নিচের দিকে প্রোত্থিত অংশকে root বা শিকড় বলেছেন। root এবং পেরেক একই অর্থ প্রকাশ করে যদিও পেরেক বলাই উত্তম। কারন শিকড় ছড়িয়ে থাকে কিন্ত পেড়েক একমুখী----পাহাড়ের root ও একমুখী যা ম্যান্টলে প্রবেশ করানো থাকে। 




পর্বতসমূহকে পৃথিবী তথা ভুমির মধ্যে পেরেকরুপে  গেঁথে দেওয়ায় এটা আবারো প্রমান হয়েছে যে বিছানা দ্বারা এখানে crust ই বুঝানো হয়েছে।


এজন্যই পবিত্র কুরআনে বিছানা শব্দের ব্যবহার হয়েছে। বিছানা বলতে সমতল নয় বরং বক্র crust এর বর্নণাই দেয়া হয়েছে। 


আরো একটি মজার ব্যাপার লক্ষ করুন, পুরো কুরআনে এমনকি প্রচলিত ১০ লক্ষেরও বেশি হাদিসে একবারও বলা হয়নি যে পৃথিবী সমতল। কেন বলা হয়নি?? পৃথিবীকে তখন সমতল দেখত সবাই, তাই সমতল বলাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বলা হল বিছানা। পৃথিবী সমতল- আমি জোর দিয়ে বলছি -একথা কিন্তু কুরআন কিংবা হাদিসে বলা হয়নি। এতেই কি প্রমাণ হয়না যে এটা মহান সৃষ্টিকর্তার বানী???

সবিশেষঃ এতক্ষন ধরে যা বুঝালাম তাতে বুঝা গেল কুরআনে বিছানা দ্বারা পৃথিবীকে সমতল বুঝানো হয়নি বরং crust এর কথা বুঝানো হয়েছে। কুরআনে যে পৃথিবীকে সমতল বুঝানো হয়নি তা দেখুন এইবারে। সমতল কথাটা কুরআনে  কোথায় আছে দেখুন --- সূরা ইনশিকাকের ৩ নম্বর আয়াতে(৮৪;৩) বলা আছে-


আর যখন পৃথিবীকে সমতল করা হবে [অনুবাদ মুহিউদ্দিন]

And when the earth is flattened out, [translation:Yusuf Ali]


এর মানে কি দ্বারায়?- বর্তমানে পৃথিবী সমতল নয় এটাইতো। পৃথিবী যদি সমতলই বলা হত কুরআনে তবে এমন আয়াতের দরকার ছিল কি??



আশা করি বুঝতে পেরেছেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন