রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৫

ইসলামে পশু অধিকার

লিখেছেন:  মিজানুর রহমান



        শিরোনামটা অনেককে অবাক করবে। অনেকের ঠোঁট প্রসারিত হয়ে মুখে একটা মুচকি হাসি খেলে যাবে। হুহ! যে ধর্মে কুরবানী নামের পশুবলি উৎসব আছে সে ধর্মে আবার পশু অধিকার! আমাদের সমাজে এমন লোকের মোটেও অভাব নাই। কুরবানীর কারনে অনেকেই মনে করেন ইসলাম একটা হিংস্র ধর্ম। অথচ সত্যটা একেবারেই উলটো। ইসলাম পশু পাখিদের যে অধিকার চৌদ্দশ বছর আগে দিয়েছে সেগুলোর জন্য মাত্র কিছু বছর থেকে সরকার এবং বিভিন্নসংস্থা গুলো ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইসলামে জীব জন্তুদের অধিকার জানার আগে আমাদের একটা কথা জেনে নেওয়া উচিত। আল্লাহ পশুপাখি এবং পৃথিবীর সবকিছু অর্থাৎ গাছ, জল, আকাশ, সূর্য শুধুমাত্র মানুষদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন’ [সূরা বাক্বারাহ/২৯]।
ইসলাম বৈধ পশু-পাখি খাওয়া জায়েয। ইসলাম এমন অযৌক্তিক কথা বলেনা যে সকলে নিরামিষভোজী হও অথবা প্রাণ খেওনা। এটা একেবারেই অবৈজ্ঞানীক ওযুক্তিহীন কথা। সকলে নিরামিষভোজী হলে পৃথিবী টিকেই থাকতো না। আর উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে, তাহলে মানুষ খাবে কী?! ইসলাম পশু পাখি খাওয়ার অনুমতিও দিয়েছে আবার সেই সাথে কিছু সাবধানবানীও দিয়েছে। ইসলাম পশু-পক্ষীর ন্যায্য অধিকার দিয়েছে। অকারণে তাদের মেরা ফেলা, খাওয়ার জন্য ছাড়া হত্যা করা, তাদের উপর বেশী বোঝা চাপানো, নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্য তাদের কষ্ট দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, :-‘আল্লাহর অভিশাপ সেই ব্যক্তির উপর, যে(অকারণে) পশুর অঙ্গহানী ঘটায় [নাসাঈ/৪৪৪২ ; ইবনে হিব্বান ,বাইহাকী]।
অর্থাৎ শুধু মজা করার জন্য কোন পশুর অঙ্গহানী করা যাবেনা। তাকে কোন ভাবেই অকারণে কষ্ট দেওয়া যাবেনা। আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) একবার কুরাইশ বংশের কতিপয় নবযুবকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় লক্ষ্য করলেন যে, তারা একটি পাখীকে বেঁধে রেখে(হাতের নিশানা ঠিক করার জন্য সেটার উপর নির্দয়ভাবে) তীর মারছে। তারা পাখির মালিকের সাথে এই চুক্তি করেছিল যে, প্রতিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট তীর তার হয়ে যাবে। সুতরাং যখন তারা ইবনে উমারকে দেখতে পেল, তখন ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে গেল। ইবনে উমার (রা.) বললেন, ‘এ কাজ কে করেছে? যে এ কাজ করেছে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ। নিঃসন্দেহে রাসুলুল্লাহ (সা.) সেই ব্যক্তির উপর অভিশাপ করেছেন, যে কোন এমন জিনিসকে(তার তীর খেলার) লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে, যার মধ্যে প্রাণ আছে’ [বুখারী মুসলিম] প্রশ্ন হল, অকারন বা মজা করার জন্য পশুহত্যা করা কেমন ধরনের পাপ? মহানবী(সা.) এব্যাপারে বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট সব চাইতে বড় পাপিষ্ট ব্যক্তির একজন হল সেই ব্যক্তি, যে খামোখা পশুহত্যা করে’ [দ্রঃ হাকেম, বাইহাকী,সহীহুল জামে’/১৫৬৭]। খামাখা পশুহত্যাকারী অর্থাৎ শখের শিখারী যারা তারা হল সব চাইতে বড় পাপিষ্টদের একজন। পশু শিকার অনেকের কাছে অনেক গৌরবের হলেও ইসলাম তার অনুমোদন করেনা। অর্থাৎ ইসলাম পশুদের বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে। তাদের অকারন হত্যা করাকে নিষিদ্ধ করেছে। এব্যাপারে আরো একটি হাদীস দেখুন। দয়ার নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অধিকার ছাড়া (অযথা) একটি বা তার বেশি চড়ুই হত্যা করবে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ সেই চডুই সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন’। বলা হল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! অধিকারটা কী (যে অধিকারে তাকে হত্যা করা বৈধ হবে)?’ তিনি বললেন, ‘অধিকার হল এই যে, তা জবাই করে খাওয়া হবে এবং মাথা কেটে(হত্যা করে) ফেলে দেওয়া হবেনা’ [নাসাঈ; সহীহ তারগীব/২২৬৬]। এই হাদীস থেকে বোঝা যায় শুধু মাত্র খাওয়ার উদ্দেশ্যেই হত্যা করা যাবে। অন্য কোন কারণে নয়। তবে, কোন জন্তু-জানোয়ার মানুষের ক্ষতি করলে তাকে মেরে ফেলা যাবে। বিষাক্তপ্রাণী ঘরে ঢুকলেও তাকে মেরে ফেলা যাবে। যেমন সাপ বা বিচ্ছু। তবে বাইরে কোথাও যেখানে তারা মানুষের কোন ক্ষতি করবেনা সেখানে তাদের মারা যাবেনা। এবং একজনের কারনে পুরো দলকেওমারা যাবেনা। 

একদা একটি গাছের নিচে একজন নবীকে পিঁপড়ে কামড়ে দিলে তিনি গর্তসহ পিঁপড়ের দল পুড়িয়ে ফেললেন। আল্লাহ তাঁকে অহী করে বললেন, ‘তোমাকে একটি পিঁপড়ে কামড়ে দিলে তুমি এমন একটি জাতিকে পুড়িয়ে মারলে, যে(আমার) তসবিহ পাঠ করত? তুমি মারলেতো একটিই মারলে না কেন, (যে তোমাকে কামড়ে দিয়েছিল)?’ [বুখারী মুসলিম/২২৪১]। ভেবে দেখুন ইসলাম শুধু পশু পাখি নয়, একটা সামান্য পিপড়ারও অধিকার নিশ্চিত করেছে। সুবহান’আল্লাহ! এছাড়াও বলা হয়েছে, একটা পশুর সামনে অন্য পশুকে যবেহ না করতে, মা পাখির থেকে তার শিশুকে আলাদা না করতে, পশু পাখিকে খাবার না দিয়ে বেঁধে না রাখতে ইত্যাদি। এমনকি, পশু পাখিদের প্রতি দয়া প্রদর্শনে আছে নেকি। একদা লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! জীব জন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শনেও কি আমাদের সওয়াব আছে? তিনি বললেন,- ‘প্রত্যেক সজীব প্রাণবিশিষ্ট জীবের(প্রতি দয়াপ্রদর্শনে) সওয়াব বিদ্যমান’ [বুখারী/২৪৬৬; মুসলিম/২২৪৪]।
(সংগৃহীত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন