শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০১৫

নাস্তিকদের হত্যা করা এবং ইসলামী আইন প্রসঙ্গ

লিখেছেন: মাহদী

 

         যদি কোন ব্যাক্তি প্রকাশ্যে আল্লাহ সুবহানা তায়ালা বা নবী (সা:) কে অবমাননা করে বা অশ্লীল ভাষায় গালি দেয়, কটাক্ষ করে হেয় প্রতিপন্ন করে তবে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ডের কথা যা বলা হয়েছে সেটা অবশ্যই ইসলামিক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে হতে হবে এবং ইসলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার পরেই সেই আইন প্রযোজ্য হবে এর পূর্বে নয়। যেমন:- মদীনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্বে মক্কার জীবনে কাফেররা নবী (সাঃ) কে অনেকে গালি দিয়েছে এমনকি আঘাতও করেছে কিন্তু এত নির্যাতন সত্বেও এবং সুযোগ থাকার পরও আল্লাহ বা তাঁর রসূল সাহাবীদের কাফেরদের এমন হত্যার আদেশ দেননি। এর কারণ কখনই এটা নয় যে ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের পূর্বে মুসলমানরা ছিল দূর্বল তাই তখন যদি হত্যা করা হয় তবে মুসলমানদেরই টিকে থাকা কষ্টকর হবে আর ইসলামী রাষ্ট্রের মাঝে তা করলে কেউ কিছুই করতে পারবে না। না এটা ঠিক নয় কারন মুসলমানরা দূর্বল থাকলেও আল্লাহ সুবঃ তো আর দুর্বল নন, উদাহরনস্বরুপ- যখন তায়েফে নবী (সা:)কে আঘাত করা হয়েছিল তখন আল্লাহ সুবঃ অসংখ্য গজবের ফেরেশতা পাঠিয়ে দিলেন ফেরেশতারা নবী (সা:)কে বললেন আল্লাহ সুবঃ আমাদের হুকুম দিয়েছেন যে যদি আপনি আদেশ করেন তবে আমরা তায়েফবাসীদের এই দুই পাহাড়ের মাঝে ধসিয়ে দিব। কিন্তু নবী (সা:) তা আদেশ দিলেন না ঊল্টো আরও তাদের জন্য হেদায়েতের দোয়া করলেন, মূলত এটা ছিল আল্লাহরই সিদ্ধান্ত।
হ্যাঁ তাহলে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের পরে কেন হত্যার নির্দেশ? তার কারণ হল ইসলামিক রাষ্ট্র একটি এলাকায় তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় যখন উক্ত এলাকায় নবী (সা:) এবং ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারনা ও দাওয়াত পুরোপুরিভাবে পৌছানো হয় এবং মোটামুটিভাবে একচতুর্থাংশ জনগন তা কবুল করে, আর সত্য সংবাদ প্রচারের পরও যারা নবী (সাঃ) কে অবমাননা করে তারা মূলত ঐ রাষ্ট্রের মাঝে ফিতনার সৃষ্টি করতে চায় এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায় যা ঐ রাষ্ট্রের সবার জন্য হুমকি মোটকথা তারা তখন অবশ্যই স্পষ্টত দেশদ্রোহী, তাছাড়া একটি এলাকায় সত্য প্রতিষ্ঠিত হবার পর এই ধরনের কর্ম অবশ্যই পুনরায় মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার পথ করে দেয় তাই একে সর্বশক্তি দিয়ে ঠেকানো ঐ এলাকার দায়িত্বশীল তথা মুসলিমদের কর্তব্য তাই এখানে হত্যার বিধান রাখা হয়েছে। তাছাড়া যেকোন পাপের বিচার আল্লাহ সুবঃ পরকালে করেন তবে ইসলামে শুধু সেসব পাপেরই সাজা দুনিয়াতেও কিছুটা করার ব্যবস্থা দিয়েছেন যেসব পাপের কারনে নিজের ক্ষতির পাশাপাশি সমাজ এবং অন্যেরও ক্ষতি করা হয়।

ইসলামিক রাষ্ট্রের মাঝে ইসলামেরই নবীকে বদনাম করা নিঃসন্দেহে অন্যদের মাঝেও মিথ্যা ছড়ানো, যার দ্বারা অন্যরা অনুপ্রানিত হয়ে ইসলাম হতে দূরে সরে যাবে এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করবে কিন্তু ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের পূর্বে এমন হত্যা করলেও ইসলাম হতে দূরে সরিয়ে যাবে মানুষ এবং ইসলামকে শান্তির ধর্মের বদলে নির্মম ভাববে। যারা ইসলামিক পন্ডিত আছেন তাদের প্রায় সকলেই জানেন যে ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের পূর্বে এবং পরে ইসলামিক আইনের আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়াতে। এখন প্রশ্ন হল একজনকে গালি বা অপবাদ দেয়ার অপরাধ হত্যা হয় কিভাবে? এর কারন হল যাকে গালি দেয়া বা অপবাদ দেয়া হচ্ছে সে যদি হয় এমন কেউ যিনি মানুষের জন্য সত্য পথের সন্ধানদাতা এবং অনুকরণীয় কেউ তবে সেটা অবশ্যই বড় ধরনের অপরাধ সেই এলাকায় যেখানে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, এছাড়া অনেক সময় কাউকে আঘাত করা বা হত্যাকেও ক্ষমা করা হয় যদি তা এক্সিডেন্টলী হয়ে যায় আবার অনেক সময় মুখের কথাকেও হত্যা উপযোগী গণ্য করা হয় যদি সেইধরনের কথা হয়ে থাকে। আর এদেশের বেশিরভাগ লোক নামমাত্র মুসলিম হলেও মুসলমানদের মাঝেই বেশিরভাগই নবী (সাঃ) এর পুরো জীবনী বা চরিত্র সম্পর্কে অবগত নয় সেখানে অমুসলিম, নাস্তিকরা তো ধর্মকে জেনেছেই ভুলভাবে এবং ভুল সোর্স হতে। যাকে আজ মুরতাদ ভেবে হত্যা করা হল হত্যাকারীরা কি নিশ্চিত ছিল যে সে সারাজীবনই নাস্তিক থেকে যাবে বা কিছুদিন পরেই সেও যে মুসলিম হবে না এর গ্যারান্টি কি তারা দিতে পারবে? যেহেতু অনেকেই প্রথমে ইসলামের প্রচন্ড বিরোধী ছিল পরে সে আরও ভাল মুসলিম হয়েছে এমন নজির অনেক আছে।
        সবচেয়ে বড় কথা হল যারা গনতান্ত্রিক বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র ভাবে তাদের ইসলাম সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞান আছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না বা বেশির ভাগ মুসলিম হওয়াতে মুসলিম কান্ট্রিকে যারা ইসলামিক কান্ট্রি ভাবে তারা যে বলদ এটা বুঝা যায় এদের সাথে সঠিক ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। মোটকথা এদেশ ইসলামিক রাষ্ট্র নয় তাই উক্ত অপরাধে হত্যার শাস্তি ইসলামিক আইন নয় আর ইসলামিক রাষ্ট্র এর মাঝে হলেও তা করবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি নয় । মুসলমানদের মাঝে অসংখ্য দল এক দল আরেক দলকে অমুসলিম ভাবে এসব বিভিন্ন কারনে তারা মূল ইসলাম হতেই বেরিয়ে যায় এখন এদের কেউ কোন ভুল করলে সেটা হবে সেই দলের ভুল বা সেই ব্যক্তির ভুল বা যে মাদ্রাসার ছাত্ররা করেছে তাদের সিলেবাসের ভুল। কিন্তু তার কারণে যারা ইসলাম ধর্মকেই ভুল ভাবে তারা আরো বলদ। আর জেনেশুনে যারা ঐসব ভুল কনসেপ্টওয়ালা মুসলিমের ভুলকেই ইসলামের নামে চালায় মিডিয়াতে ইসলামকে দমিয়ে রাখার উদ্দেশ্য, তারা মূলত ইসলামের শত্রু যারা ইসলামকে ধ্বংস করতে চায়(বৃথা চেষ্টা):-


১) অভিজিত রায়কে হত্যা - উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের প্রতি(বিশেষ করে ইসলামী দলগুলোর প্রতি) শিক্ষিত মহল, বাঙ্গালী হি্ন্দুসহ ভারতকে এবং আমেরিকাকে ক্ষেপানো  এবং রাজনৈতিক ফায়দা লুটা। এতে অনেকটাই সফল হলেও এই হত্যার মাধ্যমে বাঙ্গালী সাধারন মুসলিম এমনকি ধার্মিক হিন্দুদের মাঝেও তেমন সারা না পাওয়ায়(হিন্দুবিদ্বেষী ও নাস্তিক ছিল বলে) এবং আশানুরূপ রাজনৈতিক সু্বিধাও হাসিল না হওয়ায়-
২) পূর্বের প্ল্যানে কিছু পরিবর্তন এনে ঘটনাস্থলেই এবার সরাসরি মাদ্রাসার ছাত্র হাতে নাতে ধরার মাধ্যমে এবার মুসলমান ঘরের মুক্তমনা পরিচয়দানকারী এক যুবক ওয়াশিকুর বাবু্কে এবং কিছুদিন পরেই সিলেটে যে হত্যা করা হল এটার উদ্দেশ্য ছিল অনেকটা এরকম যে - দেশে এত ইসলামী জঙ্গী, মৌলবাদী , গোড়ামীদের  আশকারা বেড়ে যাচ্ছে যে তাদেরকে শক্ত হাতে নির্মূল করা উচিত, আর ইসলাম ধর্ম মানেই এর বিদ্বেষীদের কুপিয়ে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলা। ইসলাম ক্ষমতায় নেই তাই এখনি যে অবস্থা আর ইসলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা হলে কি যে হতো?                          
[বিঃ দ্রঃ আমি কখনই বলছি না যে এই দুটি খুন কোন মুসলিমের সন্তান করেনি। বরং সচেতন করছি এই বলে যে, ইসলামী জঙ্গীসহ অন্যান্যদের এমনকি সন্দেহভাজনদেরও এমন কঠোর ভাবে নজরদারী করা হয় যে তারা কোন প্ল্যান করার অনেক পূর্বেই ইন্টেলিজেন্সের মত কিছু গ্রুপের মাধ্যমে অয়াকিফহাল্ থাকে । সুতরাং জঙ্গীদের নাশকতা ইচ্ছে করেই করতে দেয়া হয় তখনই যখন কিনা উপর হতে অর্ডার আসে (নিঃসন্দেহে ইসলামকে কালার করার জন্যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন