শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০১৫

সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্তের “বৈজ্ঞানিক” প্রমানঃ (পর্ব ১)

লিখেছেন: সাইফুল ইসলাম

 

সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ কি আছেন? Intelligent Design কি সত্যি?
এধরনের প্রশ্ন যেকোনো যৌক্তিক মানুষের মাঝে আসাটাই স্বাভাবিক। কারন যেকোন ধরনের বিশ্বাসই হতে হবে যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু বর্তমান সময়ের কিছু তথাকথিত নামধারী বিজ্ঞানমনস্ক! নাস্তিকরা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সেই নাস্তিকদের জবাব দিতেই এই প্রবন্ধ(পর্ব ১) ।  
যদি একজন সৃষ্টিকর্তা থেকে থাকেন তবে তার পরিকল্পনার ছাপ চারপাশের প্রকৃতিতে খুজে পাওয়ার কথা? প্রকৃতির অসামান্য সব উপাদানগুলোর মধ্যে এক চিন্তাশীল সত্ত্বার ছাপ খুজে পাবেন এবং সেগুলির প্রমানগুলো একে একে দিতে গেলে হয়ত এই লেখাই শেষ হবে না...তারপরও আমি এই প্রবন্ধে(পর্ব ১) সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্তের কিছু “বৈজ্ঞানিক” প্রমাণ দেখবঃ
১। পৃথিবীঃ এর আকৃতি এবং গঠন অবিশ্বাস্য রকমের নিঁখুত। পৃথিবীর আকৃতি এবং এর অভিকর্ষ ক্ষমতা এর চারদিকে ৫০ মাইল ব্যাসার্ধের একটি বায়ুমণ্ডলকে টিকে থাকতে সাহায্য করছে যার বেশিরভাগই অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন এর সমন্বয়ে তৈরি। যদি পৃথিবী আকৃতিতে কিছুটা ছোট হতো, তাহলে একটি বায়ুমণ্ডলের অস্তিত্ব সম্ভবই হতো না, যেমনটা দেখা যায় বুধ গ্রহের বেলায়। অন্যদিকে এর আকৃতি যদি খানিকটা বড় হতো তাহলে এর বায়ুমণ্ডলে শুক্র গ্রহের মত প্রচুর পরিমান হাইড্রোজেন পাওয়া যেত এবং জীবনধারণ করা অসম্ভব হতো। এই মহাবিশ্বে পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যার বায়ুমণ্ডলে সব গ্যাসগুলো এমন এক নিঁখুত অনুপাতে আছে যাতে  জীবনধারন সম্ভবপর হয়।
সূর্য্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বটা একবারে সঠিক, যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই।
পৃথিবীতে তাপমাত্রার উঠানামার পরিমাণটাই ধরুন ... -৫০ ডিগ্রি থেকে +৫০ ডিগ্রির মধ্যেই ঘোরাফেরা করে। পৃথিবী যদি সূর্য্য থেকে আরো কিছুটা দূরে অবস্থান করতো, তাহলে আমরা সব জমে বরফ হয়ে যেতাম। আর যদি কিছুটা কাছে অবস্থান করতাম, তাহলে অবস্থা হত বারবিকিউ করা মুরগির মত ...সঠিকভাবে বললে বর্তমান অবস্থান থেকে ভগ্নাংশ পরিমান বিচ্যুতিও পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বকে অসম্ভব করে তুলবে। পৃথিবী সূর্যের সাথে এই নিঁখুত দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি সূর্য্যের চারদিকে প্রতি সেকেন্ডে ২৯.৭৬ মাইল বেগে পরিভ্রমন করছে।
এটি নিজ অক্ষের সাপেক্ষেও ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে একবার পাক খাচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে রাত ও দিনের। ভূপৃষ্ঠের এক অংশ যখন তাপ গ্রহন করে, অন্য অংশ যেখানে রাত চলছে তা তাপ ছেড়ে শীতল হয় ... এভাবে পৃথিবী নিজ অক্ষে ঘূর্ণনের মাধ্যমে সূর্য্য থেকে শক্তি গ্রহন এবং ছাড়ার একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখছে।

চাঁদের কথাই ধরা যাক... পৃথিবীর উপর চাঁদের মহাকর্ষ টানের প্রভাবে সাগর- মহাসাগরগুলোতে জোয়ার ভাটার সৃষ্টি হয়। আর এই কাজটা করার জন্য এর আকৃতি এবং পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব যতটুকু হওয়া প্রয়োজন, চাঁদের মধ্যে তা নিঁখুতভাবে বিদ্যমান। পৃথিবীর উপর চাঁদের টান এমন যে জোয়ার ভাটা সৃষ্টির মাধ্যমে জলরাশি একজায়গাতে থেমে না থেকে সব সময় প্রবাহমান অবস্থায় থাকে, অন্যদিকে  টান এত তীব্রও না যে সাগরের পানিকে টেনে এনে জনবসতিপূর্ণ মহাদেশগুলোর উপর আছড়ে ফেলবে। 

২। পানিঃ রঙহীন, গন্ধহীন এবং স্বাদহীন একটা তরল। অথচ কোনকিছুই এটা ছাড়া বাঁচতে পারে না। উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষের শরীরের বেশিরভাগ অংশই পানি...মানবদেহে আসলে কি পরিমান পানি আছে? যদি মানবদেহের কঠিন উপাদান থেকে পানিকে আলাদা করা হয় তাহলে ওই পানির ওজন হবে, মাথা এবং গলা ব্যতিত বাকি শরীরের ওজনের সমান । আমরা যদি পানির গুনাগুনগুলো বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো, জীবনের অস্তিত্বের জন্য এইসব গুনসমূহ অনন্যরুপে প্রয়োজনীয়। পানির অপর নাম জীবন কথাটাতো আর এমনই এমনিই বলা হয় না ।
পানির স্ফুটনাংক লক্ষনীয়ভাবে বেশি, অন্যদিকে হিমাঙ্কও অনেক কম। তাই পানি খুব সহজে বাস্পীভূত হয় না আবার সহজে বরফও হয় না। আমরা এমন এক পরিবেশে বাস করি যেখানে তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত  উঠানামা করছে, কিন্তু পানির এই তাপের বিরুদ্ধে স্থিতিশীল থাকার গুন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা সবসময় ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকতে সাহায্য করে।
পানি একটি অসাধারন দ্রাবক। বেশিরভাগ মৌলকেই এটি খুব সহজে দ্রবীভূত করে ফেলে, তাই আমাদের শরীরের পানি খুব সহজেই  ভিটামিন, মিনারেল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থকে এক কোষ থেকে অন্য কোষে নিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে পানি রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়, তাই অন্য পদার্থের সাথে বিক্রিয়া না করেই এটি প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ দেহের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয়। পানির পৃষ্ঠটান বৈশিষ্ট্যটাও অসাধারন। এই গুণের কারনেই পানি অভিকর্ষজ ত্বরণের বিরুদ্ধে উঁচুতম গাছের পাতায় পাতায় পৌঁছে যায়, গাছকে দেয় বেঁচে থাকার উপাদান। পানি বরফ হওয়ার সময় উপরের স্তর থেকে বরফ হওয়া শুরু করে, সবচেয়ে নিচের পানি বরফ হয় সবার শেষে। ঠিক একারনেই মেরু অঞ্চলের মাছ এবং পানির নিচের অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারে। উপরের স্তর বরফ হয়ে গেলেও নিচের স্তর স্বাভাবিক থেকে যায়। ৯৭ শতাংশ পানিই সমুদ্রে এবং লবণাক্ত। কিন্তু এই পানিকে বিশুদ্ধ করার জন্য পৃথিবীতে একটি প্রক্রিয়া চালু আছে যার মাধ্যমে পানি থেকে লবণ  নিষ্কাশন করে সারা পৃথিবীতে পৌঁছে দেয়...এর নাম হল বৃষ্টিপাত। সমুদ্রের পানি বাষ্পীভূত হয়, লবণ থেকে মুক্ত হয়ে উপরে পৌঁছে মেঘে পরিনত হয়। বাতাস এই মেঘগুলোকে সহজেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয়। প্রাণী এবং উদ্ভিদকুল পেয়ে যায় জীবনের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান...পানি।

৩। পৃথিবীকে রক্ষাকারী চৌম্বক বলয়ঃ আমরা জানি, সূর্য্যের আলো এই পৃথিবীর জন্য খুবই দরকারি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, সূ্র্য্যের থেকে সৃষ্টি হওয়া সৌর ঝড়(solar wind) আমাদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এই সৌর ঝড়(solar wind) পৃথিবীতে প্রবেশ করতে পারে না, তবে যদি পারত তাহলে পৃথিবী আর বসবাসের যোগ্য থাকত না।
কিন্তু কেন এই সৌর ঝড়(solar wind) পৃথিবীতে প্রবেশ করতে পারে না?
কারণ পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ গঠনের কারনে পৃথিবী একটি বিশাল চৌম্বকদণ্ডের মত আচরণ করে এবং চৌম্বকদণ্ডের মতই পৃথিবীর চারদিকে একটি বিশাল চৌম্বক বলয় আছে। পৃথিবীর চারপাশের এই চৌম্বক বলয় সূর্য্যের থেকে সৃষ্টি হওয়া সৌর ঝড়(solar wind) থেকে আমাদের রক্ষা করে। এটা থেকে আমরা পৃথিবীর গঠনে একজন সৃষ্টিকর্তা সরাসরি হস্তক্ষেপ দেখতে পাই। 
 
৪। চোখঃ এটা ৭০ লক্ষেরও বেশি রঙ আলাদা করে চিনতে পারে। ক্যামেরার ফোকাস ঠিক করে নিতে হয়, কিন্তু চোখের ফোকাস অটোমেটিক এবং এটি একইসাথে ১৫ লক্ষ তথ্যকে হ্যান্ডেল করতে পারে। বিবর্তনবাদ দৈহিক রুপান্তর এবং অঙ্গসমূহের ভেতর ও বাইরে থেকে ক্রমশ পরিবর্তনের কথা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। অথচ বিবর্তনবাদ কখনই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে না কিভাবে এই চোখ বা মস্তিস্কের উদ্ভব হল। 

৫। মহাবিশ্বের শুরুঃ বিজ্ঞানীরা এব্যাপারে একমত হয়েছেন যে মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে আলো ও শক্তির এক মহা বিস্ফো্রণের মাধ্যমে, যেটাকে আমরা বিগ ব্যাং(Big Bang) বলে থাকি। এটা ছিল সবকিছু অস্তিত্তে আসার মুহূর্তঃ বস্তু, সময় এবং স্পেস। আমাদের মহাবিশ্বের অস্তিত্ব অনন্তকাল ধরে ছিল না, বরং এটার একটা শুরু আছে...কিন্তু কি এই শুরুর পেছনে দায়ী? এই হঠাৎ বিস্ফোরণের কারন বিজ্ঞানীরা আজও বের করতে পারেন নি।

তবে বিজ্ঞানীরা এব্যাপারেও একমত হয়েছেন যে, বিগ ব্যাং(Big Bang) একটি 
নিয়ন্ত্রিত বিস্ফো্রণ। এই বিস্ফো্রণটি যদি আরেকটু বেশি গতিতে হত তাহলে সব বস্তু একে অপর থেকে অনেক দূরে সরে যেত, ফলে গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে গ্যালাক্সিগুলি তৈরি হতে পারত না। আর যদি এই বিস্ফো্রণটি আরেকটু কম গতিতে হতো তাহলেও বস্তুগুলি অভিকর্ষিক আকর্ষণের কারনে নিজেদের সাথে সাথে লেগে থাকত, তাহলেও গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে গ্যালাক্সিগুলি তৈরি হতে পারত না।
পদার্থ বিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রমানিত সূত্রের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে Law of Thermodynamics। এই সূত্র অনুসারে, শক্তির কোন ধ্বংস বা সৃষ্টি নেই। শুধু একরুপ থেকে আরেকরুপে পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু শুধু মাত্র বিগ ব্যাং(Big Bang) এর ক্ষেত্রেই এই আইন বাতিল। বিগ ব্যাং(Big Bang) থেকে সকল শক্তি এবং বস্তু সৃষ্টি হলেও, বিগ ব্যাং(Big Bang) এর পর থেকে এই মহাবিশ্বে নতুন আর কোন বস্তু বা শক্তি তৈরি হয় না। উল্লেখ্য বিগ ব্যাং(Big Bang) একবারই হয়েছিল। এর পর আর কোন বিগ ব্যাং(Big Bang) হয়নি। বিগ ব্যাং(Big Bang) যদি নিজে নিজেই হত, তাহলে আপনার মাথার উপর এখনই একটা হতে পারে। 

৬। মহাজাগতিক নিয়মঃ পুরো মহাবিশ্ব একই মহাজাগতিক নিয়মের মাধ্যমে পরিচালিত হয়...কেন এটা হয়? অনিশ্চয়তা এবং পরিবর্তনশীলতা আমাদের জীবনের একটা অংশ। কিন্তু মহাবিশ্বের নিয়মগুলোর দিকে তাকান এর কোনও পরিবর্তন নেই... অভিকর্ষ শক্তি বাড়ছে না কিংবা কমছেও না, সবসময় ২৪ ঘণ্টাতেই এক দিন সম্পন্ন হয়, আলোর গতি সবসময় একই, সেটা আমাদের পৃথিবীতেই হোক অথবা অন্য কোনও ছায়াপথে, এক মগ গরম কফি রেখে দিন, কিছুক্ষনপর ঠাণ্ডা হয়ে যাবে... আপনি পৃথিবী কিংবা মঙ্গলগ্রহ যেখানেই অবস্থান করুন না কেন এই নিয়মের কোন পরিবর্তন নেই। আমাদের মহাবিশ্ব কেন এত সুবিন্যস্ত, কেন এত নির্ভরযোগ্য? রিচার্ড ফ্রেনম্যান, একজন নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী বলেন, "বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীরা হতবাক হয়েছেন মহাবিশ্বের এই আশ্চর্য নিয়মগুলো লক্ষ করে। মহাবিশ্বের নিয়ম মেনে চলার পেছনে কোন যুক্তিযুক্ত প্রয়োজনীয়তা নেই, যেখানে কিনা এটা গাণিতিক নিয়ম মেনে চলে!! মহাবিশ্বের এমন আচরন করার কোন প্রয়োজন নেই; বরং এমন একটা মহাবিশ্ব কল্পনা করা সহজ যার নিয়মগুলো সর্বদা পরিবর্তনশীল অথবা এমন একটা মহাবিশ্ব যেখানে বস্তুসমূহ শূন্যের মধ্য থেকে হঠাৎ করে আবির্ভূত হয়।" তিনি আরও বলেন,"প্রকৃতি কেন গাণিতিক নিয়ম অনুসরন করে চলে সেটা একটা রহস্য। আসলে আমাদের চারপাশে এত নিয়ম এবং বিন্যাসের উপস্থিতি যেন বিশাল এক মিরাকল।"

৭। ডিএনএ কোডঃ কেউ যদি একটা instruction manual তৈরি করে তবে সেটা সে উদ্দেশ্য নিয়েই করে। আপনি কি জানতেন যে কম্পিউটার প্রোগ্রামের মত করে আপনার প্রতিটা কোষে বিস্তারিত প্রোগ্রাম লিখা আছে? আপনি হয়ত জানেন কম্পিউটার কোডগুলো জিরো এবং ওয়ান এর সমন্বয়ে তৈরি। উদাহরণস্বরূপ : 1101001110। এই ০ আর ১ এর বিন্যাস কম্পিউটারকে বলে দেয় তাকে কি করতে হবে এবং এই ০ এবং ১ এর মাধ্যমেই কম্পিউটারের সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
আমাদের কোষের ডিএনএ কোড এর সাথে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ। ডিএনএ কোড চারটি কেমিক্যাল নিয়ে গঠিত, বিজ্ঞানীরা এদেরকে সংক্ষেপে A,T,G,C বলে থাকেন। মানবকোষে তাদের বিন্যাস উদাহরণস্বরূপ অনেকটা এরকম : CGTGTGACTCGCTCCTGAT। প্রতিটা কোষে এরকম তিনশত কোটি অক্ষরের বিন্যাস থাকে! মানুষের ডিএনএর রাসায়নিক বন্ধনগুলো খুলে যদি উপাদানগুলো একটার পাশে অন্যটা রাখা যেত তবে তা পৃথিবী থেকে সূর্য‌্যের দূরত্বের ১৩৩৩ গুন লম্বা হত! যেভাবে আপনি প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে কম্পিউটারকে নির্দিষ্ট কাজ করাতে পারেন তেমনি ডিএনএ কোড কোষকে নির্দেশনা দেয় । ডিএনএ কোড হল তিনশত কোটি অক্ষরের সমন্বয়ে তৈরি এক বিশাল প্রোগ্রাম যা কোষকে বিশেষভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়। এটা একটা পরিপূর্ণ instruction manual. কেন এই তথ্যগুলো এত বিস্ময়কর? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে কিভাবে এই তথ্যসমৃদ্ধ ডিএনএ কোড জীবকোষে চলে আসলো? এগুলো শুধুমাত্র কেমিক্যাল নয়, এমন কেমিক্যাল যা নির্দেশনা প্রদান করে, এটা নিখুতভাবে বর্ণনা করে কিভাবে একটা প্রাণীর দেহ বেড়ে উঠবে। কখন এবং কিভাবে এই কোডের উৎপত্তি হল জীববিজ্ঞান তা সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করতে পারে না। এর মত নিঁখুত নির্দেশনা এবং তথ্যের সমন্বয় কখনও সম্ভব নয় যদি না কেউ এটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি না করে থাকে। আমরা যদি শুধুমাত্র একটা কোষের ডিএনএ কোড প্রতি সেকেন্ডে তিনটা অক্ষর বেগে পড়তে শুরু করি এবং রাতদিন অবিরত পড়তে থাকি তবে তা শেষ হতে একত্রিশ বছর লেগে যাবে! এটা নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে যে, ডিএনএর ৯৯.৯% ই এক আরেকজনের সাথে মিলে যায়। এই অতিক্ষুদ্র ০.১% অমিলের কারণেই একজন আরেকজনের মধ্যে এত পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। ডিএনএ কোডের সূক্ষ্মতা এখান থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। আমেরিকান সরকার ৯ (নয়) সংখ্যার এক সামাজিক কোডের মাধ্যমে এর সকল নাগরিককে চিহ্নিত করে ফেলছে। অন্যদিকে আপনার আছে তিনশত কোটি অক্ষরের এক আইডি কোড, যেটা শুধুমাত্রই আপনার। এই কোড আপনাকে চিহ্নিত করে এবং আপনার কোষসমূহকে প্রতিনিয়ত নির্দেশনা দিয়ে যায়। কাজেই বোঝা যাচ্ছে ডিএনএ কোড কেন এত গুরুত্বপূর্ণ। ডঃ  ফ্রান্সিস কলিন্স, হিউম্যান জিনোম প্রোজেক্ট এর ডিরেক্টর বলেন, "ডিএনএ কে একটা নির্দেশনা কোড হিসেবে ভাবা যেতে পারে, একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম যেটা কোষের নিউক্লিয়াসে ইন্সটল করা আছে।" এই জটিল কোড এমনি এমনি তৈরি হয়েছে বলে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা আর ঢেউ এর ধাক্কায় সৈকতের বালিতে বিদ্রোহী কিংবা গীতাঞ্জলীর মত কাব্যগ্রন্থ রচিত হয়েছে বলে দাবি করার মতই হাস্যকর। আপনি যদি সৈকতের বালিতে কবিতার লাইন দেখতে পান, তাহলে সেটা একজন বুদ্ধিমান মানুষ লিখেছে বলেই ধরে নিবেন...কারন এই কবিতার লাইন একটা সুগঠিত জটিল এক মেসেজ, যেটা এমনি এমনিই তৈরি হয় না। তেমনিভাবে ডিএনএ কোডের মত জটিল, সূক্ষ্ম ৩০০ কোটি অক্ষরের এক বিন্যাস যা আপনার কোষকে নির্ধারণ ও নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে তা কিভাবে এলোমেলো কিছু ঘটনার কারনে তৈরি হতে পারে? ২০০০ সালের ২৬ জুনে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন, মানব জিনবিন্যাস উন্মোচনকারীদের অভিবাদন জানিয়ে বলেন,"আমরা আজ এমন ভাষা বুঝতে সক্ষম হয়েছি যার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা জীবনকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিকর্তার পবিত্র এই সৃষ্টির জটিলতা, সৌন্দর্য, মহিমা বুঝতে পেরে তাঁর প্রতি সম্ভ্রমই কেবল বৃদ্ধি পাচ্ছে।" ক্লিনটনের পরবর্তী বক্তা হিসেবে ডঃ ফ্রান্সিস কলিন্স বলেন,-"এটা একই সাথে আমাকে বিনয়ী এবং বিস্মিত করছে যে আমরা নিজেদের এই "instruction book" এর খানিকটা বুঝতে পেরেছি, ইতিপূর্বে যেটা শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তার জানা ছিল।" যদি আমরা জীবদেহের এই ডিএনএ কোডকে বিবেচনা করি, তাহলে আমরা একজন অতুলনীয় বুদ্ধিমান সত্ত্বার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারি না।

আশা করি এই পর্বে আলোচনা করা ৭টি বিষয় অনেককেই সৃষ্টিকর্তা অস্তিত্ত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। এরপরের পর্বে এরকম আরও ৭টি বিষয় নিয়ে আবার আপনাদের সামনে আসব। মনে রাখবেন, বিশ্বাস হতে হবে যুক্তিসঙ্গত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন