মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৫

বিবর্তনবাদের ক্রমবিকাশতত্ত্ব, একজন চার্লস ডারউইন ও একজন গ্রেগর মেন্ডেল

লিখেছেন: আদনান ইউনূস



        চার্লস ডারউইনের ক্রমবিকাশ তত্ত্ব বিশ্লেষণে একথা প্রমানিত যে তা অন্তঃসার ও একবিন্দু অভিনবত্ব নেই। তা থেকে এমন কোন নতুন তত্ত্বের সন্ধান দিতে পারেনি যা পূর্বে কারো জানা ছিল না। ডারউইন ক্রমাগত কয়েক বছরের অবিশ্রান্ত অনুসন্ধান ও চিন্তা-গবেষনার পর একটি তত্ত্ব হিসেবে তার মতকে জনসমক্ষে পেশ করেছেন। তাঁর একমাত্র কৃতিত্ব ও বিশেষত্ব এতটুকুই। কেননা জীবনের ক্রমবিকাশ সংক্রান্ত চিন্তাধারা প্রাচীন গ্রীক দর্শনের একটি অংশ হিসেবে বর্ণিত ও বিবৃত হয়ে এসেছে বহুকাল আগে থেকেই। জীবনের বিভিন্ন আকার আকৃতি(FORMS OF LIFE) সহ বিশ্বালোকের প্রত্যেকটি বস্তু পরিবর্তন ও বিবর্তন লাভ করেছে বলে গ্রীক দার্শনিক হিরাক্লিটাস খৃষ্টপূর্ব পাঁচশ বছর পূর্বে মত প্রকাশ করেছিলেন। এম্পডোকলিস খৃষ্টপূর্ব সাড়ে চারশ বছর পূর্বে দাবি করেছিলেন। জীবন প্রস্তর থেকে উদ্ভুত আর জীব জন্তু প্রাণী অস্তিত্ব পেয়েছে উদ্ভিদ থেকে। প্রাচীন মুসলিম দার্শনিক ও অধ্যান্তবিদরাও ক্রমবিকাশবাদের কোন না কোন তত্ত্বের প্রবক্তা ছিলেন। কিন্তু সেসব ছিল নিতান্তই ধারনা, অনুমান ও চিন্তাবিলাস মাত্র। মানুষ প্রত্যেকটি জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয়কে সহজ ও সুবোধ্যরুপে দেখতে ইচ্ছুক ওসব চিন্তাধারা এ প্রবণতারই ফল। কিন্তু তার পিছনে যুক্তির ভিত্তি ছিল অনুপস্থিত।



ডারউইন কতৃক সর্বপ্রথম বিজ্ঞানের ভাষায় তাঁর যান্ত্রিক ক্রমবিকাশতত্ত্ব উপস্থাপিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীরা তা দুহাতে লুফে নেন। আর প্রখ্যাত বিজ্ঞানী থমাস হাক্সলি তা শুধু গ্রহণই করলেন না, আন্তরিক প্রযত্নে তাকে সামনের দিকে অগ্রসর করে দিলেন।


ডারউইনের গ্রন্থ ORIGIN OF SPECIES প্রকাশিত হওয়ার পর কয়েক বছরের মধ্যেই অস্ট্রিয়ায় আত্নগোপনকারী পাদ্রী গ্রেগর মেন্ডেল বিজ্ঞানের একটি অখ্যাত পত্রিকায় ''প্রজনন শাস্ত্র'' GENETICS নিয়ে স্বীয় গবেষণা প্রকাশ করেন। এ গবেষণা এতই জ্ঞানগর্ভ, যুক্তিভিত্তিক ও অকাট্য ছিল যে, তা যথাসময়ে সাধারণ্যে প্রকাশিত হলে জনসাধারন ডারউইনের ক্রমবিকাশ তত্ত্বকে ছুড়ে ফেলত নর্দমায়। কেননা গ্রেগর মেন্ডেলের গবেষনার আলোকে ডারউইনের চিন্তাধারা অন্তঃসার ও ভুয়া প্রমানিত হয়েছে কিন্তু সে গবেষনা মধ্যহ্ন সূর্যের ন্যায় সত্য হলেও দীর্ঘ ৪০ টি বছর পর্যন্ত তা লোকচক্ষুর অন্তরালে এক অখ্যাত পত্রিকার পৃষ্ঠায় পড়ে থাকল। কেউ-ই সেদিকে লক্ষ্য দিতে আগ্রহী হল না। অপরদিকে ডারউইনের অন্তঃসার শুন্য ক্রমবিকাশতত্ত্ব চিন্তা-গবেষনার শুন্য মাঠে জনচিত্ত জয় করে নিল এবং বটবৃক্ষের ন্যায় একমাত্র মতাদর্শরুপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বসল।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব-রসায়নের (BIO-CHEMISTRY) অধ্যাপক উইলিয়াম এস. বেক লিখিত MODERN SCIENCE AND THE NATURE OF LIFE নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে:

"মেন্ডেলের সময় ডারউইনের গ্রন্থ জনমনকে এতটা প্রভাবিত করেছিল যে, মেন্ডেলকে বুঝতে কেউই কষ্ট স্বীকার করতে রাজী হল না। মূলারের বক্তব্য হল- মেন্ডেলের প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট না হওয়ার কারন সম্ভবত এই যে, তিনি তার সমকালীন চিন্তা ও বিশ্বাস থেকে সামনের দিকে অনেক দুর এগিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বিস্ময়করভাবে বিচক্ষনতার দ্বারা বিষয়টির উভয় দিক উপলদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন বংশানুক্রমিকতার যান্ত্রিক রুপকে এবং তার অনুসন্ধান লাভের কার্যপদ্ধতিকে। সম্ভবত গ্রেগর মেন্ডেল তাঁর সমসাময়িক যুগের অনেক পূর্বে জন্মগ্রহন করেছিলেন। কিন্তু একথা বলা তো ইতিহাসের চরম অপব্যাখ্যা মাত্র। আমেরিকার GENETICS SOCIETY ১৯৫০ সনে মেন্ডেলের পঁচাশিতম জন্মবার্ষিকীর পরিবর্তে ৫০তম জন্মবার্ষিকী পালন করল। এটাকে কালের প্রতি চরমতম অবিচার ছাড়া আর কি ই বা বলা যেতে পারে! কেননা বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকারবিদ্যা যা বংশীয় উত্তরাধিকার কার্যক্রমের যান্ত্রিক ব্যাখ্যা মাত্র। সেটা সঠিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নি, যতক্ষন না গ্রেগর মেন্ডেলের গবেষনাসমূহ উদ্ভাবিত হয়েছে ...(MODERN SCIENCE AND THE NATURE OF LIFE P,221)"


       ডারউইনের গ্রন্থ প্রকাশের পর দশ বছরের মধ্যেই গ্রেগর মেন্ডেলের ঐতিহাসিক ও বিপ্লবী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তা সত্ত্বেও একথা সত্য যে ডারউইনের যুগে আঙ্গিক পরিবর্তনের বংশানুক্রমিক সংক্রমন নির্ভুলভাবে বুঝতে পারা যায় নি। এখন মানুষ চিন্তা করে যে ডারউইন যদি মেন্ডেলের প্রবন্ধ পাঠ করতেন তাহলে অবস্থা কি দাড়াত? বর্তমানে আমরা মেন্ডেল প্রদর্শিত চিন্তার নতুন পদ্ধতিতে জানতে পারছি যে-- বংশানুক্রমিক বস্তুর বিশেষ একক (UNITE) জিন যেমন নির্দিষ্ট তেমনি মিশ্রনঅযোগ্য। অর্থাৎ এক প্রজাতির জিন অন্য প্রজাতির জিন এ রুপান্তরিত কিংবা সংক্রমিত হতে পারে না। তা বংশানুক্রমিক সংক্রমনে মূলতই পরস্পর থেকে স্বতন্ত্র এবং নিজস্ব কোষের কেন্দ্রবিন্দুতে বন্দি আর এদেরই নির্বাচিত ধাপ বা স্তরসমূহ পুরুষ ও স্ত্রী শুক্রকীট কোষের মাধ্যমে বিশেষত্বসমূহকে এক বংশ থেকে ভিন্নতর বংশে সংক্রমিত করে। এসব একককে পরিবর্তন অর্থাৎ জিন এ পরিবর্তনসমূহ সবসময় আকস্মিকভাবে সংঘটিত হয়ে থাকে কোষের উপরিভাগে এবং পরিবর্তন কার্যক্রমের ক্রমবিকাশমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে ফিরে আসতে পারে না। এ বংশানুক্রমিক পরিবর্তনসমূহের কার্যক্রমে বিশেষ উল্লেখ্যযোগ্য বিশেষত্ব এই যে, তাদের অসংঘবদ্ধতা, পরস্পর সংযোগহীনতা এবং আকস্মিকতা। অধিকন্তু এসবের প্রতিক্রিয়ার স্বরুপ আকস্মিক দুর্ঘটনামূলক। তাদের গতি ও লক্ষ্য অনির্দিষ্ট। এভাবে যে জীবের মধ্যে এসব পরিবর্তন সংঘটিত হয় তার স্বভাবগত চাহিদার সাথে এসবের কোন সংযোগ আছে বলে প্রমানই পাওয়া যায় না ......(The Origin of Spcies. introduction p.17)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন