সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৫

অশান্তির ভাইরাস ছড়ানোর জন্য কারা দায়ী?

লিখেছেন: এ.কে চৌধুরী


অশান্তি বলতে কি বুঝায়? সাধারন ভাষায় আমরা যা বুঝি-'কোন মানুষের মনে চরম হতাশা, দু:খ, ভয়, অপমানবোধ থেকে যে যন্ত্রণা সৃষ্টি হয় সেটাই অশান্তি। অশান্তি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বৌদ্ধ ধর্মের একটা থিওরী আছে। সেটা হলো: কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ, মাতসর্য্য এই ষড়রিপু থেকে যে দূরে থাকতে পারবে সেই অশান্তি থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবে। কিন্তু দু:খের বিষয় এই নিয়ম অনুসরণ করেও তারা অশান্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেনি তার প্রমাণ তাদের আত্নহত্যার হার। আমার দৃষ্টিতে অশান্তির জন্য যেসকল বিষয় দায়ী তার মধ্যে প্রধান হলো চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ, ডিভোর্স, সমকামীতা, অপসংস্কৃতি, আত্নহত্যা, ধন-সম্পদের প্রতিযোগিতা, সংযম অবলম্বন না করা, কারও অনুপস্থিতিতে নিন্দা করা, মিথ্যা বলা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করা, সত উপদেশ না দেয়া, নিজে ভাল কাজ না করা, অন্যায়ের প্রতিবাদ না করা, ভাল ব্যবহার না করা, অধৈর্য্য হওয়া, মাদকাসক্তি .......ইত্যাদি এরকম বহু কারণ রয়েছে।


কিন্তু সকল কারণের পিছনে যে সত্য লুকিয়ে আছে সেটা হলো সর্বশক্তিমান স্রষ্টায় বিশ্বাস না করা এবং বিশ্বাস করলেও স্রষ্টা থেকে দূরে থাকা।
অর্থাত স্রষ্টায় বিশ্বাস না করলে সব ধরনের কুপ্রবৃত্তিতে মানুষ আক্রান্ত হতে বাধ্য। বৌদ্ধ ধর্মে মাত্র ৬টি কারণের কথা উল্লেখ্য আছে কিন্তু কোরআনে অসংখ্য কারণ বর্ণনা করা আছে এবং চুড়ান্ত কারণ হিসেবে উল্লেখ্য করা আছে স্রষ্টায় এবং আখিরাতে বিশ্বাস না করা। 

পবিত্র কোরআন অনুযায়ী:
# "এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।" [সূরা বাক্বারাহ: ৪]
# "তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম" [সূরা বাক্বারাহ: ৫]

নাস্তিকরা এক্ষেত্রে যে যুক্তি ব্যবহার করে তা হলো : মানুষের বিবেক এবং অপরাধবোধই হলো অশান্তি থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র হাতিয়ার। নিজের বিবেক যখনই বাধা দিবে তখন নিজেকে সংযত করতে পারলেই অশান্তি থেকে বিরত থাকা সম্ভব। কোন স্রষ্টায় বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই! কোন আখিরাতের বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই! আসুন দেখি বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কারা বেশী অশান্তিতে আছে? মুসলিমরা নাকি নাস্তিকরা? উল্লেখ্য নাস্তিকপ্রধান দেশগুলো হচ্ছে: চীন, জাপান, কিউবা, চেজ রিপাবলিক, ফ্রান্স, কোরিয়া, জার্মানী, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন ইত্যাদি। পাঠকেরা তথ্যসূত্র থেকে ভেরিফাই করে নিবেন। এখানে শুধু প্রধান প্রধান অশান্তির কারণগুলো বর্ণনা করবো স্রষ্টায় অবিশ্বাসীদের দেশের পরিসংখ্যান দিয়ে।

আত্নহত্যার দিক থেকে শীর্ষ দেশ : ২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী লিথুনিয়া, গায়ানা, সাউথ কোরিয়া, কাজাখস্তান, স্লোভেনিয়া, হাঙ্গেরী, জাপান, শ্রীলঙ্কা, লাটভেরি, বেলারুস ইত্যাদি। একজন মানুষ কি পরিমাণ হতাশায় জীবন যাপন করলে সে আত্নহ্ত্যা করতে চায় তা সহজেই অনুমেয়। অথচ এক্ষেত্রে নাস্তিক প্রধান দেশগুলোকেই বেশী দেখা যাচ্ছে। আবার যেসব দেশ পূর্বে ধর্মীয় দেশ নামে পরিচিত ছিল কিন্তু পরবর্তীতে সেক্যুলারিজম প্রবেশ করাতে সেগুলোতেও দিন দিন আত্নহত্যার হার বাড়ছে। কারণ ধন-সম্পদ দিয়েও তারা সুখী হতে পারছে না।

ধর্ষণের দিক থেকে শীর্ষ দেশ : ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইন্ডিয়া, আমেরিকা, রাশিয়া, ইটালী, কানাডা, সুইডেন, ইংল্যান্ড, ইসরাঈল, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স ইত্যাদি। এখানে তো প্রায় সবই নাস্তিক দেশ! অথচ কারই চোখে পড়ছে না। অনেক নাস্তিক দাবী করেন ইন্ডিয়া, আমেরিকা এরা ধার্মিক দেশ। কিন্তু তাদের এটাও দেখতে হবে যে এসব দেশের সংস্কৃতি কি? তারা কি আসলেই ধর্ম মানছে? বাইবেল অনুযায়ী নারীদের হিজাব পড়ার কথা অথচ আমেরিকায় উল্টো ন্যুডিস্ট সংস্কৃতির প্রভাব বেশী। ভারতের সংস্কৃতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় তারা পশ্চিমাদের অন্ধের মতো অনুসরণ করে। অনেকে শুধুমাত্র বাপ দাদাদের ধর্মের খাতিরে ধর্মের অনুসারী। স্রষ্টার প্রতি তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। ভারতীয় টিভি চ্যানেল গুলোতেও অশ্লীলতা বেড়েই চলছে। এমনকি আগামী ১০ বছরের মধ্যে যদি খোদ উলঙ্গ হয়ে সবাই টিভির পর্দায় দাড়িয়ে থাকে তাহলেও আশ্চর্য্য হবো না।

খুন-চুরি-ডাকাতির দিক থেকে শীর্ষ দেশ : ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমেরিকা, কানাডা, জার্মানী, পোল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, ইটালী, জাম্বিয়া, উগান্ডা, কোরিয়া, ইথিওপিয়া ইত্যাদি। এখানেও নাস্তিকপ্রধান দেশের সংখ্যাই বেশী। একসময় নাস্তিকরা আমেরিকার উন্নয়ন এবং পরমাণু গবেষণা নিয়ে অনেক গর্ব করতো এবং বলতো 'দেখুন মুসলিম দেশগুলোর কি হাল আর অসাম্প্রদায়িক দেশগুলোর কি হাল!" কিন্তু যখনই আমি অপরাধ-ধর্ষণের পরিসংখ্যান দেখাতে লাগলাম তখনই তারা বলতে শুরু করলো-' আমেরিকা তো ধার্মিক দেশ!"

ডিভোর্সের দিক থেকে শীর্ষ দেশ : বেলজিয়াম (৭১%), পর্তুগাল(৬৮%), হাঙ্গেরী(৬৭%), চেজ রিপাবলিক(৬৬%), স্পেন(৬১%), লুক্সেমবার্গ(৬০%), এস্তোনিয়া(৫৮%), কিউবা(৫৬%), ফ্রান্স(৫৫%), আমেরিকা(৫৩%) ইত্যাদি। অর্থাত আবারও সেই নাস্তিক দেশগুলো। পাঠকেরা ভাল করেই জানেন অশান্তি ব্যতিত কেউ কাউকে ডিভোর্স দেয় না এবং এক্ষেত্রে নারীরা চরম বিপর্যয়ে পতিত হয়। কারণ কোন পরিবারে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নারীরাই তাদের সন্তান লালনপালন করে আবার নিজেকেই উপার্জন করতে হয়। মা-বাবা এর যেকোন একজন কিংবা উভয়ের অনুপস্থিতি সন্তানের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাদের মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটতে থাকে। ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তরান্বিত হয়।

তাই এখানে সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে, সকল অশান্তির মূল কারণ স্রষ্টায় অবিশ্বাস অর্থাত নাস্তিক্যবাদ।


কিছু নাস্তিক্য যুক্তি :
কোন কোন নাস্তিক বলেন, "পৃথিবীর প্রধান বিপদজনক দেশগুলো হচ্ছে মুসলিম দেশ। যেমন: সিরিয়া, সোমালিয়া, ইন্ডিয়া, আফগানিস্তান, সুডান, আমেরিকা, ইরাক, পাকিস্তান, মেক্সিকো, রাশিয়া।
http://www.abcnewspoint.com/top-10-most-dangerous-countries-in-the-world-2015/
কিন্তু তারা লক্ষ্য করে না এসব দেশে যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিপদজনক দেশ বলা হয়েছে। যদি বিশ্বযুদ্ধের আমলের পরিসংখ্যান লক্ষ্য করা হয় তাহলে দেখা যাবে নাস্তিক দেশগুলোর চেয়ে বিপদজনক দেশ আর নেই। তাছাড়া তালেবানদের ইতিহাস পড়লে সবাই বুঝতে পারবেন যে জঙ্গী সৃষ্টির জন্য কমিউনিস্টরাই দায়ী। আমি এখানে বিস্তারিত উল্লেখ্য করছি না কারণ লেখা অনেক বিশাল হয়ে যাবে।

আবার কিছু নাস্তিক দাবী করেন যে শান্তির দিক থেকে শীর্ষে অবস্থানকারী দেশগুলোর প্রায় সবই নাস্তিক দেশ। যেমন: ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, কানাডা, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, আইসল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি।
http://edition.cnn.com/2014/03/20/travel/happiest-countries-to-visit/
কিন্তু তারা এটা লক্ষ্য করে না যে, এইসব দেশকে শান্তির দেশ বলা হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য,ঐতিহ্য এবং সম্পদের দিক থেকে। সম্পদ কখনও মানুষকে শান্তি এনে দিতে পারে না সেটা আমি উপরেই প্রমাণ করেছি। সম্পদশালী দেশগুলোর ধর্ষণ, আত্নহত্যা, ডিভোর্স এবং অপরাধের মাত্রা দেখলে এসব দেশকে কেউ জীবনেও শান্তির দেশ হিসেবে গ্রহণ করবে না। 
সুতরাং অশান্তির ভাইরাস ছড়ানোর জন্য মূলত কারা দায়ী; মুসলিম নাকি সেক্যুলারিস্ট? সেটা পাঠকেরাই বিবেচনা করবেন।

৪টি মন্তব্য:

  1. //স্রষ্টায় বিশ্বাস না করলে সব ধরনের কুপ্রবৃত্তিতে মানুষ আক্রান্ত হতে বাধ্য//-- লেখক কতখানি অবোধ তা উক্ত বাক্যটি প্রমান করে।
    কোনও ধর্ম নিরপক্ষে মুক্তমান নাস্তিক মানুষ কুপ্রবৃত্তির কবলে আছে বলুন তো?
    এর বিপক্ষে আমি হাজারটা প্রমান দেখাতে পারি!
    (আজকাল নির্বোধ ও ব্লগ গড়ে বিজ্ঞানের বলে আর ব্লগে দেখে বিজ্ঞান কোনও কদর নাই সবই আল্লাহর মহিমা।)

    উত্তরমুছুন
  2. "নারীদের মর্যাদা" ইসলাম কতখানি দিয়েছে তা আপনার নবীর জীবন কাহিনী ও কুরআন পড়ে বেশ বোঝা যায় তা আড়ম্বর সহকারে না লিখলে ও আসল সত্য বিশ্ববাসী জানে। 'শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়না'!

    উত্তরমুছুন
  3. স্রষ্টায় বিশ্বাস না করলে সমকামীতা, মদ, জুয়া, ব্যভিচার সবকিছুতেই মানুষ আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে নাস্তিকরা। আর এই ব্লগে বিজ্ঞান নিয়েও লেখা হয়েছে নারীর মর্যাদা নিয়েও লেখা হয়েছে

    উত্তরমুছুন
  4. নাস্তিক = কুপ্রবৃত্তির পূজারী

    উত্তরমুছুন