মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৫

বেদে আল্লাহ

লিখেছেন :  মো: রাফাত রহমান


আল্লাহর নাম সর্ব ব্যাপক, তিনিই সত্য, তাঁর দ্বারাই আমাদের শুরু, তাঁর দ্বারাই আমাদের শেষ। তিনিই এক ও তিনিই অদ্বিতীয়। তার নামই রয়েছে সব ধর্মগ্রন্থে। হিন্দু ধর্মগ্রন্থও তার ব্যাতিক্রম নয়। হিন্দু ধর্মের একেশ্বরবাদ প্রমান করতে যেয়ে আমরা শুধু ইক্কামইবাদিত্তিয়ামেই থেমে রয়েছি, কিন্তু বেদ উপনিষদে যে সেই একজন স্রষ্টার নামও স্পষ্ট দেয়া আছে তা আমরা কয়জনই বা জানি? হিন্দুদের কাছে যখনই তাঁর স্রষ্টার নাম জিজ্ঞেস করবেন সে বলতে পারবে না সঠিক নামটা। কেউ বলবে কৃষ্ণ, কেউ বলবে রাম, কেউ বলবে মহাদেব। কিন্তু আসল স্রষ্টাকে তারা খুঁজে পায় না যার নাম তাদের ধর্মগ্রন্থেই লুকিয়ে আছে, উল্টো তারা বিভিন্ন লেখক ও গল্পকারের বানানো কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে পড়ে থাকে যার রয়েছে মানবীয় গুণাবলি, ভোগ বিলাস, ভুল, কাম, জরা ও মৃত্যু। অনেক হিন্দু প্রশ্ন করতে পারে এবং করবেও যে হিন্দু ধর্মগ্রন্থে যদি আমরা আল্লাহ ও নবীর নাম খুজি তাহলে কেন এই হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোকে আমরা বিকৃত বলি, কেন আমরা হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোকেই স্রষ্টার বাণী মানি না? এর উওর আল্লাহ দিয়েছেন পবিত্র কোরআনের সুরা আরাফ আয়াত -১৬২ এ,

  • 'অনন্তর জালেমরা এতে অন্য শব্দ বদলে দিল তার পরিবর্তে, যা তাদেরকে বলা হয়েছিল।'
        আল্লাহ আরো বলেন সুরা আল ইমরান আয়াত ১৮৭ এ
  • 'আর স্বরন কর যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল আল্লাহ তাদের থেকে অংগীকার গ্রহন করেছিলেন যে, "তোমরা নিশ্চয়ই এর কথা লোকদের মাঝে প্রকাশ করবে, আর তা লুকিয়ে রাখবে না। কিন্তু তারা এটাকে পিঠের পিছনে ফেলে রেখেছিল।"
আজ আমরা দেখতে পাই হিন্দুরা কিভাবে তাদের ধর্মগ্রন্থ লুকিয়ে রাখে। আল্লাহ আমাদের মানব জাতিকে পথপ্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন কিতাব পাঠিয়েছেন যা সময়ের আবর্তে মানুষ নিজেদের স্বার্থে তা পরিবর্তন করেছে। এই প্রতিটি কিতাব ছিল বিশেষ জাতি, বিশেষ গোত্র বা বিশেষ কোন অঞ্চলের জন্য। বিষয়টা ব্যাখ্যা করি:- যখন প্রথম মানব আদম পৃথিবীতে যাত্রা শুরু করলেন তখন তার ও তার বংশধরদের জন্য আলাদা কিতাবের দরকার ছিল না। কারন আদম (আঃ) কে আল্লাহ নিজেই শিখিয়ে পাঠিয়েছেন, কিন্তু তার পরবর্তী বংশধরেরা তার অবর্তমানে কিছুটা বিচ্যুত হল, তখন আল্লাহ তাদের সেই বিচ্যুতি শোধরাতে কিতাব পাঠালেন। সেই কিতাবের মর্মার্থ ঐ বিচ্যুতি সমাধানের সাথে সাথেই শেষ হয়ে গেল। এভাবে মানব জাতি এগিয়ে গেল ধীরে ধীরে, যখনই মানব জাতির কোন অংশ বিচ্যুত হল আল্লাহ তাদের সেই জাতির জন্য বা অঞ্চলের জন্য কিতাব পাঠালেন। সেই কিতাব স্বার্বজনীন ছিল না বরং ছিল শুধু সেই নির্দিষ্ট জাতির জন্য, কারন সেই জাতি ব্যাতিত অন্য জাতি হয়ত সেই ভুল করেনি বা তারা সঠিক পথেই ছিল। এরকম করতে করতে যখন চলে আসল আইয়্যামে জাহেলিয়ার যুগ, যখন পুরো পৃথিবী ভুলে গেল মহান সৃষ্টিকর্তাকে, ডুবে গেল অনন্ত পাপের রাস্তায়, তখন আল্লাহ নাযিল করলেন তার লাস্ট রিভিলেশন আল-কোরান। এটি হচ্ছে মানব জাতির আল্লাহর প্রতি ও পূর্বের নির্দেশনাগুলোর প্রতি সর্বশেষ রিমাইন্ডার।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থে সবখানেই আছে স্রষ্টার একেশ্বরবাদের কথা। জাকির নায়েকের দেয়া রেফারেন্স ছাড়াও আরো অনেক পাওয়া যাবে যেমন,
  • যজুর্বেদ ৪০.১: এই সমস্ত বিশ্ব শুধু মাত্র একজন ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে। 
  • যজুর্বেদ ১৩.৪: সমগ্র বিশ্বে শুধু একজনই হর্তাকর্তা রয়েছেন। শুধুমাত্র তিনিই পৃথিবী, আকাশ, এবং অন্যান্য সত্ত্বাকে ধারণ করেন। তিনি নিজেই পরম সুখী! তিনিই শুধু মাত্র! তিনিই আমাদের দ্বারা উপাসিত হবেন।
  • অথর্ববেদ ১৩.৪.১৬-২১: তিনি না দুই, না তিন, না চার, না পাঁচ, না ছয়, এমনকি না সাত, না আট, না নয়, না দশ। তিনি একজন এবং শুধুই একজন। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ঈশ্বর নন।
কিন্তু এখন সেই একজন কে? তার নাম কি? তাকে আমরা কি বলে ডাকবো ? তার নামও রয়েছে বেদে,
  • Yajur veda 40:17, সেই সর্বব্যাপি সৃষ্টিকর্তার নাম 'ॐ;(ওম)
  • MANDUK UPANISHAD 1:1. সকল বেদ ও শাস্ত্রেই তার নাম 'ॐ;(ওম) 
  • গীতা ১৭/২৪-২৫, "পরমাত্তাই 'ॐ;(ওম) ও তার নাম জপ কর"
  • KATH UPANISHAD 7:15 যার কাছে সমস্ত জ্ঞান ও সৎ কর্ম পরিচালিত, সেই স্রষ্টার নাম ॐ (ওম) এরকম আরো বহু রেফারেন্স আছে যে 'ॐ;(ওম) ই সৃষ্টিকর্তা।
এবার আসুন দেখি এই ॐ;(ওম) কি এবং কেন? বেদ বিশেষজ্ঞরাও এই নামকে Proper Noun হিসেবেই ব্যাখ্যা করেন অর্থাৎ যার কোন অনুবাদ হয় না। বেদে ব্রক্ষ্মা, শীব, বিষ্ণু নামে যে ঈশ্বরের ত্রিত্তবাদ পাওয়া যায় তা মূলত এই ঈশ্বরেরই তিনটি গুণ যথাক্রমে ব্রক্ষ্মা= সৃষ্টিকর্তা, বিষ্ণু= পালনকর্তা, শিব= ধ্বংসকর্তা। এগুলো প্রপার নাম নয় বরং এগুলো অর্থ ও গুনবাচক নাম। কিন্তু সেই একজনের মূল নাম লেখা হয়েছে ॐ;(ওম) যার কোন অর্থ নেই ও যার অনুবাদও সম্ভব নয়। এবার নীচের ছবিটি একটু ভাল করে লক্ষ করুন:
কি বুঝলেন? মূলত এই ওম আর কিছুই নয় বরং সংস্কৃত শব্দের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মহান আল্লাহ তাআলার নাম। আল্লাহতালা নিজের নামকে বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্নভাবে ব্যাক্ত করেছেন। প্রাচীন সংকৃতিতে যখন কোন সহিফা নাযিল হয়েছিল সেখানে এভাবেই ব্যাক্ত করেছেন নিজেকে সংস্কৃত শব্দের আড়ালে। এখন কিছু হিন্দুরা অভিযোগ করতে পারে যে, বেদ আগে আসছে, তাহলে মুহাম্মদ (সঃ) বেদ পড়ে কোরআনে নিজের সৃষ্টিকর্তার নাম আল্লাহ রেখেছেন। তাদের আগেই বলে রাখছি এই টাইপের হাস্যকর প্রশ্ন করার আগে আমার নিচের পয়েন্টগুলোর দিকে ধ্যান দিন।
  •  ১৪০০ বছর আগে কি বেদ আরবী ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল ? 
উত্তরঃ না।
  • ১৪০০ বছর দূরে থাক, বেদের বর্তমানে কি কোন আরবী অনুবাদ রয়েছে ? 
উত্তরঃ না।
  • আমাদের নবিজী কি সংস্কৃত জানতেন ?
উত্তরঃ না।
  • সংস্কৃ্ত দূরে থাক, কোরআন নাযিলের আগে কি তিনি কি আরবী পড়তে পারতেন ?
উত্তরঃ না।
  •  তিনি কি কখনো ভারতে এসেছিলেন ?
উত্তরঃ না।                                                                                                                        

  এবার আমি সকল হিন্দুদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, যে কেন তাহলে আল্লাহ ও ওম নামের অক্ষর ও কাঠামো হুবহু এক? আপনার মন কি বলে? যেখানে আল্লাহ কোরআনে স্পষ্ট বলেছেন, এর আগেও তিনি কিতাব পাঠিয়েছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি ও অঞ্চলে, তাহলে সেই কথাটাই কি এই ওমের কাঠামো দাড়িয়ে সত্য হয়ে গেল না? এখন আপনার চিন্তার পালা। নিজের মনকে খুলে চিন্তা করুন।
আল্লাহর নামটা বেদে আরো স্পষ্টভাবে আছে,
  • ঋগবেদ ২/১/১১ তে,You are 'ILA' , Omnicient vision of divinity 
আল্লাহর নামের মোরফোলজি হচ্ছে Al-ILAH। আল্লাহকে ভাষাগত ডিফারেন্সে বিভিন্নভাবে ডাকা হয় যেমন, এরামিক ভাষায় 'ILAH' , Canaanite ভাষায় EL, হিব্রুতে Elohim। এখন প্রশ্ন এই ILA কে ? কোন হিন্দুকে কি কখনো শুনেছেন সৃষ্টিকর্তাকে ILA নামে ডাকতে ? অথচ বেদে স্পষ্ট বলা আছে এই সেই সর্বময় স্বর্গীয় সত্তার নাম ILA। এই 'ILA' আর কিছুই নয় বরং সংস্কৃতিতে সেই আল্লাহ নামেরই ভাষাগত ডিফারেন্স মাত্র, যে ডিফারেন্স এসেছিল হিব্রুতে কিংবা সিরামিকে, সেই ডিফারেন্সই এসেছে প্রাচীনকালের মুনি ঋষিদের সংস্কৃিতিতে।
আবার বেদ এর অন্য জায়গায় তার নাম বলা আছে ওমॐ, যার অক্ষর কাঠামো দাড়ায় হুবহু আল্লাহর নাম যা প্রমানিত। বাকিটা আমি আপনাদের চিন্তা ও বিবেকের উপর ছেড়ে দিচ্ছি।

1 টি মন্তব্য: