শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৬

নাস্তিক্যবাদের সাথে মাদকাসক্তির সম্পর্ক এতো গভীর কেন?


লিখেছেন: এ.কে চৌধুরী

মানুষ কেন মাদক গ্রহণ করে? কেউ শুধুমাত্র স্বাদের জন্য খায়, কেউ মানসিক যন্ত্রণা দূর করতে খায়, কেউ অতীতকে ভুলে যাওয়ার জন্য খায়, কেউ ভোগবাদী জীবনকে উপভোগ করার জন্য খায় আবার কেউ আত্নহত্যার জন্য খায়। আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের নাস্তিক দেখা যায়। কেউ বা ধর্ম সম্পর্কে না জেনে নাস্তিক, কেউ বা ধর্ম সম্পর্কে জেনেই নাস্তিক। কেউ বা প্রথম জীবনে ধার্মিক থেকেও পরবর্তীতে পৃথিবীর বিভিন্ন চাকচিক্য দেখে নাস্তিক হয়ে যায়। কেউ বা প্রথম জীবনে বিলাসিতার মধ্যে থেকেও শান্তি পায় না ফলে ধার্মিকতাকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। নাস্তিকদের মধ্যে মাদক, অবাধ যৌনাচার ও ডিভোর্স বেশী দেখা যায়। কিন্তু আজকের লেখার বিষয়বস্তু হচ্ছে নাস্তিক্যবাদের সাথে মাদকাসক্তির সম্পর্ক এতো গভীর কেন? পর্যালোচনার প্রথমেই আমরা  কিছু জরিপ দেখে আসি যেহেতু প্রমাণ ছাড়া লেখালেখির কোন মূল্য নেই : 


২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডে এ ব্যাপারে একটি জরিপ করা হয়।* সেখানে ৫৩৮৭ জন লোককে প্রশ্ন করে তাদের উত্তরের উপর ভিত্তি করে ৫টি ভাগ করা হয়। যার মধ্যে:
১ম গ্রুপ: ঈশ্বরে বিশ্বাসী এবং নিয়মিত ধর্মীয় চর্চা করে
২য় গ্রুপ: উচ্চতর স্পিরিচ্যুয়াল শক্তিতে বিশ্বাসী কিন্তু ধর্মীয় চর্চা করে না
৩য় গ্রুপ: ঈশ্বর সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই
৪র্থ গ্রুপ: সংশয়বাদী
৫ম গ্রুপ: ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না অর্থাত নাস্তিক।
এদের মধ্যে ১ম গ্রুপে ৫৪৩ জন ধার্মিক ছিল যাদের মধ্যে শতকরা ৩০% ভাগ প্রতিদিন ধূমপান করে, ২০% ভাগ সপ্তাহে ১ বারের বেশী ধূমপান করে এবং ১% ভাগ কোকেইন ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে। কিন্তু ৫ম গ্রুপে ১৬৫০ জন নাস্তিকদের মধ্যে ৫১% ভাগ নিয়মিত ধূমপান করে, ৩৬% ভাগ সপ্তাহে ১ বারের বেশী ধূমপান করে এবং ৬% অন্যান্য মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে। বাকি ৩টি গ্রুপের হিসাব এদের মাঝামাঝি অবস্থানে। তাই এখানে দেখা যাচ্ছে নাস্তিকরা আস্তিকদের তুলনায় বেশী মাদকাসক্ত। কিন্তু কেন? ধর্মীয় অনুশাসনই কি আমাদেরকে এসব কাজ থেকে দূরে রাখছে না? মাদকের মধ্যে যেটা সবচেয়ে বেশী কমন সেটা হলো মদ। মদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকারক দিকগুলো হচ্ছে: ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় (লিভার, কোলন, মাথা, ঘাড়, স্তন ও অন্যান্য অঙ্গ), পুষ্টির অভাব দেখা দেয়, পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ ঘটায়, লিভার সাইরোসিস ঘটায় যেটা হঠাত মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়ায়।  অনেক নাস্তিক দাবী করেন- "আমরা নিজের টাকা দিয়ে নিজেরা কিনে খাই তাতে আপনার সমস্যা কি?"
 
 
চিত্রে: মদের বোতল ও সিগারেট হাতে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন।
কিন্তু এখানে কথা হচ্ছে, মাদক শুধু নিজেরই ক্ষতি করে না বরং গোটা সমাজ ব্যবস্থার ক্ষতি করে। চলুন নিম্নে একটি পরিসংখ্যান দেখে আসি:
২০০৮ সালের আমেরিকার একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়,* আমেরিকান নাগরিকদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে ১ জন জেল খানায় আটক হয়। এদের মধ্যে শতকরা ৮০% ভাগ-ই ড্রাগ ও অ্যালকোহল এর সাথে জড়িত। তাছাড়া "National Institute on Alcohol Abuse and Alcoholism"– এর একটি জরিপে দেখা যায়, ধর্ষকদের মধ্যে শতকরা ৩৪% থেকে ৭৪% ভাগ লোকই অ্যালকোহলের প্রতি আসক্ত। দিন দিন ধর্মের প্রতি আস্থা হারানোর কারণে মানুষ নিজ ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে এ্যালকোহলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে যার কারণে অপরাধের মাত্রাও বাড়ছে। এ্যালকোহলের ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়, আত্নহত্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, হতাশা বৃদ্ধি করে, বৈবাহিক সম্পর্কের অবনতি ঘটায় যা ডিভোর্সে গিয়ে শেষ হয়, গাড়ি দূর্ঘটনা ঘটায়, বিকৃত যৌনাচারে উদ্ধুদ্ধ করে, যে সমাজে মদ্যপায়ী বেশী সে সমাজে ভায়োলেন্সও বেশী [তথ্যসূত্র-৪নং দ্রষ্টব্য]। সমাজের অপরাধীদের একটা বড় অংশ যে ক্ষতিকারক দ্রব্যের সাথে সংযুক্ত সেটার প্রমাণও আমরা উপরে দেখতে পাচ্ছি। তাছাড়া আরও উপরে আমরা দেখতে পাচ্ছি নাস্তিকদের অধিকাংশই ক্ষতিকারক দ্রব্যের সাথে আসক্ত। অর্থাত নাস্তিকদের অধিকাংশই মাদকসেবী, আবার কয়েদীদের অধিকাংশই মাদকসেবী। সুতরাং গাণিতিক হিসাব মতে: অধিকাংশ নাস্তিক = অধিকাংশ কয়েদী।
কিন্তু ধর্ম এ ব্যাপারে কি বলে? প্রায় সকল ধর্মই এর বিরোধীতা করছে প্রাচীনকাল থেকেই শুধুমাত্র নাস্তিক্যবাদ বাদে (যদিও এটা ধর্ম নয়)। নিম্নে কিছু রেফারেন্স দেয়া হল : 

1. "Also, do not get drunk with wine, in which there is debauchery. [Bible of Christian Scripture : Ephesians: 5:18]
2. "I undertake the training rule to abstain from fermented and distilled intoxicants which are the basis for heedlessness." [Fifth Precept of Buddhist Scripture]
3. "A priest-killer, a liquor drinker, a thief and a violator of his guru’s marriage bed – all of these, and each separately, should be known as men who committed major crime.” [Manu Smriti Of Hindu Scripture Ch 9: Verse 235] 
4. "O believers! Intoxicants and gambling (games of chance), dedication to stones (paying tribute to idols) and division  by arrows (lottery) are the filthy works of Shaitan. Get away from them, so that you may prosper. [Quran of Muslim Scripture: 5:90]
 
সূতরাং দেখা যাচ্ছে, প্রায় সব ধর্মগ্রন্থেই মদ, জুয়া, মাদকদ্রব্য, ব্যভিচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাত কোন ধার্মিক ব্যক্তি যদি ধর্মীয় অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলে তাকে কিছুতেই মাদকদ্রব্য স্পর্শ করবে না সে যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন। কিন্তু যদি সে নাস্তিক হয় তখন কি হবে? সে কারও বাবা কিংবা মা, অথবা সে কারও সন্তান। যখন মাদকদ্রব্যের কারণে তার হঠাত করে অযাচিত মৃত্যু হয় তখন একটি পরিবারের একমাত্র অর্থ উপার্জনের মাধ্যমকে হারাতে হয়। এমনকি পরোক্ষভাবে সামাজিক ভারসাম্যও বিনষ্ট হয়। আমি বলছি না সকল নাস্তিকই খারাপ। অনেক নাস্তিকই আছেন যারা ধর্মীয় ভালো দিকগুলো তুলে ধরতে পছন্দ করেন; যেমন: মার্ক জাকারবার্গ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছিলেন :- "Scripture tells us that we shall not oppress a stranger, for we know the heart of a stranger — we were strangers once, too."  যেহেতু সব নাস্তিক একরকম নয়। তাই এই লেখাটি শুধুমাত্র কুপ্রবৃত্তির স্বাধীনতাকামী নাস্তিকদের উদ্দেশ্যে। আশা করি, সবাই নিজেদের খারাপ মনোবাসনা থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন। ধর্ম এক্ষেত্রে আপনাদেরকে অনেক সাহায্য করবে। ভালো থাকবেন। 

তথ্যসূত্র:
1. www.sciencedaily.com/releases/2013/10/131003093041.htm
2. www.nadcp.org/sites/default/files/nadcp/Facts%20on%20Drug%20Courts%20.pdf
3. socialistworker.org/blog/critical-reading/2013/03/16/rape-crime-drinking-alcohol-is
4. https://www.nlm.nih.gov/medlineplus/ency/patientinstructions/000494.htm
5. www.facebook.com/zuck/posts/10102795248301791?pnref=story

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন