রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইসলামে পুরুষ ও নারীর পর্দা

লিখেছেন- Shamsuddha Al Amin

যখন কেউ ইসলাম প্রচার করতে যায় তখন সবার প্রথম দিকে যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তার মধ্যে একটি হল- ইসলামে নারীর পর্দা। অমুসলিম বা মর্ডান মুসলিমদের মন্তব্যের ধরণ গুলো অনেকটা এমন-

১. ইসলাম নারীকে পর্দা দিয়ে পিছনে নিয়ে যাচ্ছে।
২. ইসলাম নারীকে পর্দা দিয়ে অপমান করছে।
৩. ইসলাম নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না
৪. ইসলাম নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করতে বাধা দেয়।
৫. পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বাধা দেয়।
৬. ইসলাম নারীকে সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।

এমন আরও নানা প্রশ্ন ও মন্তব্য। আজকের দিনে বেশিরভাগ মিডিয়ার সবচেয়ে বড় টার্গেট হল নানা ভাবে ইসলামকে ছোট করা। ছোট করার জন্য তারা হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয় উপরের মন্তব্যগুলো। আমি এখানে পর্দা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। অধিকার ও অন্যান্য বিষয়ে পরে লিখব ইনশাআল্লাহ।

আসুন একনজরে ইসলাম পূর্ববর্তী নারীর অবস্থা কেমন ছিল দেখে নেই।





ব্যাবিলনীয় সভ্যতার সময় আইনে নারীর কোনো ধরণের কোনো অধিকার স্বীকৃত ছিলনা। কোনো পুরুষ যদি ঘটনাক্রমে কোনো নারীকে হত্যা করে তাহলে তাকে শাস্তি দেবার পরিবর্তে তার স্ত্রীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো।
গ্রীক সভ্যতাকে পূর্বকালের সকল সভ্যতার শ্রেষ্ঠতম ও উজ্জ্বলতম গণ্য করা হয়। গ্রীক পৌরাণিক শাস্ত্রের এক কাল্পনিক নারী যার নাম “প্যানডোরা”। বিশ্ব মানবতার সকল দুর্ভাগ্যের মূল কারণ সেই নারী। তাই গ্রীকরা নারীকে ‘প্রায় মানুষ’ অর্থাৎ মানুষের মতো বটে, কিন্তু সম্পূর্ণ নয় বলে মনে করত।
রোমানরা যখন তার বিকাশের শিখর চূড়ায় তখন একজন পুরুষ যে-কোনো সময় তার স্ত্রীকে হত্যা করার অধিকার রাখতো। নগ্ন নারী যে-কোনো আসরের সৌন্দর্য এবং বেশ্যালয় যাতায়াত পুরুষের সংস্কৃতি।
মিসরীয় সভ্যতায় নারী ‘ডাইনী’ এবং শয়তানের নিদর্শন হিসেবে গণ্য হতো।
আর ইসলাম পূর্ব আরবে নারীর অবস্থান ছিল ঘরের অন্যান্য ব্যবহারীক আসবাবপত্রের মতো। অনেক পিতা অসম্মানের হেতু হিসেবে তার শিশুকণ্যাকে জীবন্ত কবর দিত।

ইসলাম নারীকে সম্মান দিয়েছে আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। মেয়ে, স্ত্রী, মা হিসেবে সবার কাছ থেকে তারা সম্মান পায়। ইসলামই নারীকে ব্যাভিচার থেকে রক্ষা করে দিয়েছে পুরুষের সমান মর্যাদা। সবক্ষেত্রে নিশ্চিত করেছে তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার। দিয়েছে উভয়ের জন্য পর্দার বিধান।

ইসলামে পর্দাঃ

ইসলাম পুরুষ ও নারী সকালের জন্য পর্দার বিধান দেয়। কারণ নারী একা পর্দায় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। তাই দরকার পুরুষ ও নারীর উভয়ের পর্দার বিধান। আল্লাহ কুরআন এ প্রথমে পুরুষ ও পরে নারীর পর্দার বিধান দিয়েছেন।

পুরুষের পর্দার আয়াতঃ

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। (সূরা-নূর, সূরা সংখ্যা- ২৪, আয়াত সংখ্যা- ৩০)

যে মুহুর্তে কোনো পুরুষ একজন নারীর দিকে তাকাবে- লজ্জাকর অশ্লীল চিন্তা তার মনে এসে যেতে পারে। কাজেই তার দৃষ্টি অবনত করবে এবং এটাই তার জন্য কল্যাণকর।

নারীর পর্দার আয়াতঃ

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা-নূর, সূরা সংখ্যা- ২৪, আয়াত সংখ্যা- ৩১)

পোষাক এর পর্দার ছয়টি শর্তঃ

পর্দার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে পোষাক। আমাদের পোষাক ঠিক থাকলেই প্রায় ৫০ ভাগ বা তার বেশী পর্দার কাজ হয়ে যায়। কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী পোষাক এর পর্দার ছয়টি শর্ত আছে।
১. মাত্রা বা পরিমাণ- পুরুষের জন্য ঢেকে রাখার বাধ্যতামূলক পরিসীমা তার দেহের নুন্যতম নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। নারীর জন্য এই পরিসীমা কব্জী, মুখমন্ডল ছাড়া বাদবাকি শরীরের সকল অংশ। তারা যদি চায় তাহলে তা-ও আবৃত করে নিতে পারে। ইসলামের বিশেষজ্ঞ আলেমগণের অনেকেই হাত ও মুখমন্ডলকেও ঢেকে রাখার অংশ মনে করেন। তবে এটা অবশ্যই পালন করতে হবে কেউ বলতে পারবে না।

বাকী পাচটি বিষয় নারী পুরুষের জন্য সমান।

২. পরিধেয় পোষাক যথেষ্ট ডিলেডালা হতে হবে। যেন কোনভাবে দেহের কাঠামো প্রকাশ না পায়।

৩. পরিধেয় কাপড় এতটা পাতলা ও স্বচ্ছ হতে পারবে না যাতে ভেতরটা দেখা যায়।

৪. পোশাক এতটা আকর্ষণীয় ও জাকজমকপূর্ণ হতে পারবে না যাতে বিপরীত লিঙ্গ আকর্ষিত হয়।

৫. পোশাক এমন হতে পারবে না যা বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের মতো বা সমরুপ।

৬. পোশাক এমন হতে পারবে না দেখতে অবিশ্বাসীদের মতো। তাদের এমন কোনো পোশাক পরা উচিৎ নয় যা বিশেষভাবে পরিচিত এবং চিহ্নিত অন্য ধর্মাবলম্বীদের (যারা মূলত অবিশ্বাসী)। যেমনঃ ক্রস পরিধান করা।

ছয় ধরনের পরিচ্ছদের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ পর্দা ব্যক্তির নৈতিক চরিত্র, আচার-আচারণ, অভিব্যক্তি এবং লক্ষ উদ্দেশ্যকেও বুঝায়। একজন ব্যক্তি সে যদিও শুধু কাপড়-চোপড়ের পর্দা পালন করে তাহলে সে আমার মতে অর্ধেক হিজাব পালন করল। পোশাকের পর্দা পালনের সাথে সাথে চোখের পর্দা, মনের পর্দা, চিন্তা-ভাবনার পর্দা এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্যের পর্দাও থাকতে হবে। পর্দার সীমার মধ্যে আরো যা পড়ে, তা হলো- ব্যক্তির চলা, কথা বলা এবং তার সার্বিক আচরণ ইত্যাদি।

  

পর্দা কেন?

পুরুষদের জন্য পর্দায় আছে পবিত্রতা। যা আল্লাহ বলেছেন- সূরা- নূর এর ৩০ নং আয়াতে।

নারীকে কেন পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে কুরআনে আল্লাহ আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন- 

হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা - আহযাব, সূরা সংখ্যা- ৩৩, আয়াত সংখ্যা- ৫৯)

জ্যোতীময় কুরআন বলছে নারীকে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে এই জন্য যে, তারা যেন রুচিশীলা পরিচ্ছন্ন নারী হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এবং এটা তাদেরকে লজ্জাকর উৎপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করবে।

অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে। পর্দা কিভাবে রক্ষা করবে? একটা উদাহরণ থেকে পরিষ্কার হবে বিষয়টি।

মনে করুন জমজ দু’টি বোন। উভয়ই অপূর্ব সুন্দরী। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের একজন পরেছে ইসলামী পর্দা সম্পন্ন পোষাক। অর্থাৎ সম্পূর্ণ দেহ আবৃত। শুধু কব্জী পর্যন্ত হাত ও মুখমন্ডল খোলা। অন্যজন পরেছে পশ্চিমা পোশাক। শরীরের অধিকাংশ খোলা এবং প্রায় অর্ধ-উলঙ্গ। সামনেই এক মোড়ে আড্ডা দিচ্ছে এক দল যুবক। মেয়েদেরকে দেখে উত্ত্যক্ত করাই তাদের কাজ। এখন এই দুই বোনকে যেতে দেখে তারা কাকে উত্ত্যক্ত করবে? কাকে উদ্দেশ্য করে শীশ দেবে? যে মেয়েটি নিজেকে ঢেকে রেখেছে তাকে না যে মেয়েটি প্রায় অর্ধ উলঙ্গ হয়ে আছে তাকে দেখে?

উত্তর একটাই। তারা উত্ত্যক্ত করবে অর্ধ উলঙ্গ মেয়েকে। এতে সবাই একমত হবেন। এজন্য ইসলাম নারীকে পর্দার মাধ্যমে দিয়েছে সম্মান। দিয়েছে আত্নমর্যাদা। দিয়েছে নিজেকে রক্ষা করার কৌশল।

পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সাথে নারী স্বাধীনতার তথাকথিত এই শ্লোগান এখন আমাদের বাংলাদেশেও চলে এসেছে যা একটি প্রকাশ্য প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। তারা নারীর দেহের সৌন্দর্যকে খুলে ব্যবসা করার একটি লোভনীয় ফাঁদ এটেছে। তারা এই তথাকথিত স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে নারীকে ভোগ করছে নিজের কামনা বাসনায়। বেশীরভাগ পত্রিকায়, খবরে আমরা প্রায়ই দেখতে পাই, মডেল হতে এসে নিজের ইজ্জত হারিয়েছেন অনেক নারী। কত নারীর সম্মানহানী হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে এটা কোন সমস্যা না। কারন এটা তাদের দৈনন্দিন ব্যাপার এবং তারা অনেকটা অভ্যস্ত। কিন্তু আমার এই প্রিয় দেশে এমন ঘটনা কেন ঘটছে? এর প্রধান কারন কি? নারী ও পুরুষ উভয়েই তাদের পর্দা ঠিক মত পালন করছে না, ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া হচ্ছে না।

তারা নারী স্বাধীনতার নামে চালাচ্ছে রমরমা দেহ ব্যবসা। নিজে নারী হলে প্রশ্ন করুন- এই স্বাধীনতাই কি একজন নারী হিসেবে আপনি কামনা করেন? যদি পুরুষ হন তাহলে চিন্তা করুন- নিজের বোন, স্ত্রী, মেয়েকে পারবেন এমন স্বাধীনতা দিতে?

যারা পোষাক খুলে কাজ করাকেই কিংবা অর্ধ উলঙ্গ হওয়াকেই নারী স্বাধীনতা বলেন তারাও কি পারবেন নিজের মা, বোন, স্ত্রী, মেয়েকে এভাবে স্বাধীন করে দিতে?

জানি পারবেন না। নিজের স্ত্রী, বোন, মা, মেয়ের বেলায় পারবেন না তাহলে অন্যের মেয়ে, মা, বোনকে এর বেলায় কিভাবে পারছেন?
আজব শব্দ এই স্বাধীনতা।

আমি আমার বাংলাদেশে স্বাধীন। তার মানে এই না আমি যা ইচ্ছা তাই করব। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলব। বাংলাদেশের গোপন কথা প্রচার করব। দেশের সাথে বেইমানি করতে পারব না। এসব নিয়ম মেনে আমি স্বাধীন।

আমি স্বাধীন তবে আমাকে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। ইসলামও আমাদের স্বাধীনতা দেয়। ইসলাম নারী পুরুষকে স্বাধীন করে দিয়েছে। কিন্তু তাদেরকে ইসলামের দেয়া কিছু বিধান মেনে চলতে হয়। এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।

কিছু কিছু অতিরিক্ত নারীবাদী পুরুষ আবার পাল্টা প্রশ্ন করেন। বলেন- নারী উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় চললেও পুরুষের অধিকার নেই সেই নারীকে উত্ত্যক্ত করার কিংবা ধর্ষন করার।
জ্বী আমিও একমত। নারী যদি পর্দা নাও করে তবুও কোন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করতে পারবে না। ইসলামও এই ধর্ষন সমর্থন করে না। সেই ধর্ষকের শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। তাকে সেই শাস্তি পেতে হবে। কোন নারী যদি পর্দা না করে তবুও পুরুষের জন্য এটা ঠিক না যে, নিজের জন্য যে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে তা ভঙ্গ করা।

অনেকেই আবার বলেন- আমরা উলঙ্গ হতে বলি নি। শুধু হিজাব, বোরকা নিয়ে বলেছি।
আমি তাদের বলি- আপনারা উলঙ্গ হয়ে চলাচল করতে নিষেধ করেন কেন?
তারা বলে- এটা অশ্লীল, অশালীন, সুস্থ সংস্কৃতির বিরোধী।
আমি তাদের বলি- আপনাদের শালীনতার লেভেল এখানে। আর আমাদের শালীনতার লেভেন ঐখানে। আপনাদের চেয়ে একটু উচু মানের শালীনতা আমরা মুসলিমরা বজায় রাখি। আমরা মুসলিমরা পর্দা ছাড়া চলাচলকেই অশ্লীল মনে করি।

কিছু নারীবাদী পুরুষ বলে গরমে মেয়েদের এমন পোষাক বিরক্তিকর।
আমি তাদের বলি- মেয়েদের পোষাক নিয়ে মেয়েরা সমস্যা জানাচ্ছে না। আপনাদের সমস্যা কোথায়? আপনাকে তো বোরকা পড়তে বলা হচ্ছে না।

কিছু so called মর্ডান মুসলিম মেয়ে বলে- আমরা পর্দা করব না। পর্দা দিয়ে আমাদের আগের যুগে নিয়ে যাচ্ছে। আগের মত তাদের ঘরে বন্দী করার প্লান চলছে। আমি নারী, আমি স্বাধীন।
আমি বলি- জ্বী। আপনাকে পর্দা করতে কেউ বাধ্য করতে পারবে না। দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই (০২ঃ২৫৬)। আপনি পর্দা না করা আপনার ব্যাপার। এর শাস্তিও আপনার। আমাদের কাজ আপনাকে সতর্ক করা। ইসলাম নারী পুরুষের পর্দার বিধান দিয়েছে পবিত্রতা ও নিজেকে রক্ষার জন্য। নারীর পর্দা করা মানে এই না সে ঘরে বন্দী হয়ে থাকবে। তার সব অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। পর্দায় থেকেও সে তার আত্নিক, নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় থেকে শুরু করে সব অধিকার পাবে। আমরা না, বরং আপনারাই আগের যুগে ফিরে যাচ্ছেন যা ছিল জাহেলিয়াতের যুগ। যেখানে নারীকে শুধু ভোগ্য পন্য মনে করা হত। আপনি স্বাধীন ঠিক আছে। কিন্তু আপনার স্বাধীনতা যেন পশ্চিমা বিশ্বের নারী স্বাধীনতার মত স্বাধীন না হয়।

এক নারী আবার প্রশ্ন করে, আমি শাড়ি পড়ে রাস্তায় চলেছি। আমাকে কেউ ধর্ষন করে নি। আর আমাদের বাঙ্গালী পোষাক শাড়ি। এটা পড়তে ইসলাম কেন বাধা দিবে?

আমি বলি- বোন আপনি ধর্ষিতা হন নি বেচে গেছেন। কিন্তু আপনি না হলেও অনেকেই হচ্ছে। শাড়ি পড়ার কারণে কেউ ধর্ষিত হয়নি এটা কেউ বলতে পারবে না। বরং আমি উপরে উদাহরণ দিয়েছি- ইসলামী হিজাব আপনাকে উত্তক্ত হবার হাত থেকে রক্ষা করে। যদি একা রাস্তায় হাটেন কিছু বিকৃত মানষিকতার লোক আপনাকে উত্তক্ত করতেই পারে। শাড়ি পরে আপনি সম্পুর্ণ পর্দা পালন করতে পারবেন না। বিভিন্ন জায়গায় শাড়ি পরা মেয়েরাও ধর্ষিত হচ্ছে। আর একটা কথা বোন। আপনি আগুন নিয়ে খেলছেন। আগুন নিয়ে খেলার সময় সবসময় পুড়ে যায় না। তবে কিছু সময় যে পুড়ে না এটা না। সতর্ক থাকতে দোষ নেই। আর এখানে হিজাব বা পর্দা হল সেই সতর্কতা।

বাঙ্গালী পোষাক যদি ইসলামের বিরুদ্ধে যায় তাহলে আপনি কোনটা মানবেন? ইসলাম না বাঙ্গালী? খাটি মুসলিম হলে আপনাকে ইসলামের কথা মেনে চলতে হবে। ইসলাম বাঙ্গালী পোষাকে বাধা দেয়, কারণ ইসলাম চায় না নারীর অধিকার ক্ষুন্ন হোক, নারীকে ছোট করা হোক, নারী লাঞ্ছিত হোক। ইসলাম চায় না নারী সবার ভোগ্য পন্য হোক। সকলে তার সৌন্দর্য্য উপভোগ করুক। এ কারণে ইসলাম এটা বাধা দেয়।

আর বাংলাদেশের সব নাগরিকের সংবিধান মেনে চলা উচিত। বাংলাদেশের সংবিধান আপনাকে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করার অধিকার দিয়েছে। বাঙ্গালী শাড়ি পরতে বাধ্য করছে না। এটা আপনার পছন্দের উপর ছেড়ে দিয়েছে। শাড়ি অথবা পর্দা আপনার পছন্দ। তাহলে কেন নিজের আত্নরক্ষায়, সতর্কতা হিসেবে আমরা কি পর্দা করব না যা ইসলাম আমাদের বলে?

বিশ্বের সবচেয়ে বেশী তথাকথিত নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে কোন দেশ? সবার উত্তর হবে- আমেরিকা। পুলিশ রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১০ সালে আমেরিকায় ৮৪,৭৬৭ জন ধর্ষনের ঘটনার রিপোর্ট হয়েছে। অনেক পরিসংখ্যান বলে ধর্ষনের ২০% এর কম রিপোর্ট হয়। এই হিসাবমতে আমেরিকায় প্রতিদিন প্রায়- ১১০০ এর বেশি নারী এবং প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৪৮ জন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।

আপনাদের একটি প্রশ্ন করি- আমেরিকায় যদি ইসলামী শরিয়াহ প্রয়োগ করা হয় (ইসলামী পর্দা ও ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদন্ড) তাহলে এই ধর্ষনের হার কি বেড়ে যাবে নাকি কমে যাবে? অবশ্যই কমে যাবে। এটাই বাস্তব সম্মত আইন। এটার হাতে নাতে প্রমাণ পাবেন।

আমাদের বাংলাদেশে ২০০৬ সালে ধর্ষণের রিপোর্ট হয় ১১ হাজারের বেশী। চিন্তা করতে পারেন? আমাদের প্রিয় দেশে যদি ইসলামী শরিয়াহ থাকত তাহলে এত এই ঘটনা ঘটত না। সংখ্যা অনেক কমে যেত। ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী তারিখ সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এস সি তে যে ঘটনা ঘটেছে এটা হয়েছে আমাদের দেশে ইসলামী শরিয়াহ নেই বলে। পুরুষরা নারীদের দেখে দৃষ্টি সংযত করে নি এবং নারীরাও পর্দা করে নি। এর ফলে ঘটেছে নোংরা কিছু কর্মকান্ড। এটার কারণ একটাই হিজাব না মানা এবং ধর্ষকের শাস্তি কার্যকর না করা। যদি আমাদের দেশের সবাই(নারী ও পুরুষ) পর্দার নিয়ম মেনে চলে তাহলে ধর্ষন এর অংক শূন্যের কোঠায় চলে আসবে।

এখনই চিন্তার সময়। আমাদের দেশ কি আমেরিকার মত তথাকথিত নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হবে নাকি ইসলামের আলোয় আসবে? প্রশ্ন রইল আপনাদের কাছে। 

একটা প্রশ্ন ও মন্তব্য- আমেরিকায় যে ৮৪ হাজারের বেশী ধর্ষিত হয়েছে তার থেকে কেউ ১০০ জন নারীও দেখাতে পারবে না, যারা ইসলামী পর্দা মেনে চলত। বাংলাদেশের ১১ হাজারের বেশী ধর্ষনের কেউ দেখাতে পারবে না, ১০০ জন নারী পুরুষ ইসলামী পর্দা অনুসরণ করত। যদি দেখাতেও পারে তবুও শতকরার হিসেবে তা হবে নগন্য। তাহলে কি এটা বলা যায় না, যারা ইসলামী শরিয়াহর পর্দা মেনে চলে তারা কম ধর্ষিত হয়।

আরও একটা প্রশ্ন ও মন্তব্য- আমেরিকার চেয়ে বাংলাদেশে ধর্ষনের হার কম কেন? বাংলাদেশের চেয়ে সৌদি আরবে আরও কম কেন?আমেরিকার চেয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা বেশী পর্দা মানে এবং বাংলাদেশের চেয়ে সৌদি আরবে বেশী পর্দা মেনে চলা হয়। তাই ধর্ষনের হারও কম। ধর্ষনের হার কম হবার পদ্ধতি এই ইসলামী পর্দা, এটা জানার পরও কিছু কিছু মানুষ এটার বিরোধিতা করে যাবেই।

ইসলাম নারী ও পুরুষের পর্দার বিধানের মাধ্যমে দিয়েছে সম্মান ও পবিত্রতা। পর্দা নারীকে অপমান করার জন্য না। তাকে সম্মান দেয়ার জন্য। যারা হিজাব পালন করে তাদের জন্য সবার মন থেকে সম্মান আসে। ইসলাম আপনার স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে না। অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে না। পর্দায় থেকে আপনি আপনার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, শিক্ষাগত, আত্নিক সহ সকল অধিকার পেতে পারেন। আপনি পর্দায় থেকে বাইরে কাজও করতে পারেন। ইসলাম এতে বাধা দিবে না। পরবর্তীতে ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব আশাকরি।

সবশেষে সবাইকে আহবান জানাই, ইসলাম আমাদের নারী ও পুরুষের যে পর্দার বিধান দিয়েছে তা আমরা পালন করি এবং সুন্দর একটি সমাজ জাতিকে উপহার দেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন